নজরদারি থেকে বাঁচতে চ্যাটিং অ্যাপে রাশ টানার নিদান সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলির
পকেটে বা টেবিলের পাশে রাখা রয়েছে ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট যুক্ত স্মার্টফোন। আলোচনা চলছে গাড়ি, বাইক, ব্র্যান্ডেড জামা-প্যান্ট, ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ইত্যাদি নিয়ে। কিছুক্ষণ পর থেকেই ফোনের ব্রাউজারে ‘প্রিটেক্সট’ হিসেবে ভেসে উঠছে ওই সমস্ত জিনিসের বিজ্ঞাপন। এভাবেই চোখের পলকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নীতি সংক্রান্ত আলোচনা ফাঁস হয়ে যাচ্ছে স্মার্টফোনের মাধ্যমে। জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী দাবি করে গত দু’বছরে বহু চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে মোদি সরকার। এবার ঘরের গোপন আলোচনা ‘শত্রু’ প্রযুক্তির মাধ্যমে বাইরে বেরনো আটকাতে নির্দেশিকা জারি করল গোয়েন্দা সংস্থাগুলি।
সরকারি আধিকারিকরাই নিরাপত্তা নীতি সংক্রান্ত জাতীয় গাইডলাইনস ও নির্দেশিকা মানছেন না। ফলে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে গোপন নথি, আলোচনা। সূত্রের খবর, সেই কারণেই সরকারি আধিকারিকদের হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামের মতো অনলাইন চ্যাটিং অ্যাপ ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা এই সমস্ত অ্যাপগুলির মাধ্যমে পাঠানো তথ্য বেসরকারি কোম্পানির বিদেশি সার্ভারে মজুত থাকছে। বিভিন্নভাবে বেহাত হয়ে যাচ্ছে সেই তথ্য। পাশাপাশি, গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সিরি, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট বা অ্যালেক্সার মতো ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট যুক্ত স্মার্টফোন, স্মার্ট ওয়াচের মতো ডিভাইসেও নিষেধাজ্ঞা জারির নিদান দেওয়া হয়েছে। সেগুলি মিটিং রুমের বাইরে বন্ধ করে রেখে আসতে হবে। অফিসে আমাজন ইকো, অ্যাপল হোম পড, গুগল হোমের মতো অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিভাইস রাখার ব্যাপারেও বিধি-নিষেধ জারি করা হয়েছে। অনলাইন অ্যাপ ব্যবহার করে ভিডিও কনফারেন্স এবং ওয়ার্ক ফ্রম হোম না করার সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। এই নির্দেশিকা মেনে চলার পাশাপাশি গোপন নথি ফাঁস রুখতে সমস্ত মন্ত্রককে জরুরি পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা আধিকারিক জানিয়েছেন, সাধারণত স্মার্টফোনে গুরুত্বপূর্ণ নথি স্ক্যান করে বেসরকারি অ্যাপের মাধ্যমে তা সহকর্মীদের পাঠান আধিকারিকরা। কিন্তু জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে একাজ করা যাবে না। করোনা পরিস্থিতিতে যেহেতু বহু আধিকারিক বাড়ি থেকে কাজ করছেন, তাঁদের জন্যও নির্দেশিকা জারি করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। সেক্ষেত্রে হোম সেট আপে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করার ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে। ওয়ার্ক ফ্রম হোমে আধিকারিকের কম্পিউটার বা সিস্টেম ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অফিস নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত রাখতে হবে। ভার্চুয়াল মিটিং বা ভিডিও বৈঠকে গোপন নথি নিয়ে আলোচনা করা যাবে না। অফিস সেট আপের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্স করতে হবে। আর তা তৈরি করবে সি-ড্যাক বা এনআইসির মতো সরকারি সংস্থা। বেসরকারি মিটিং অ্যাপের ব্যবহারের পরিবর্তে আধিকারিক, মন্ত্রীদের নির্দিষ্ট সরকারি পরিকাঠামো তৈরি করতে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড, ওয়েটিং রুম এবং অ্যাটেন্ডেন্সের মতো সুবিধা থাকতে হবে।