মালদহে জেলা কমিটি থেকে বাদ সিপিএমের বহু নেতা
বহর কমল মালদহ সিপিএমের জেলা কমিটির। সম্পাদকের পদে কোনও পরিবর্তন না হলেও বয়সজনিত কারণে জেলা কমিটি থেকে বাদ পড়লেন বেশ কয়েকজন ওজনদার নেতা। পরিবর্তে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় সিপিএমের জেলা কমিটিতে নিয়ে আসা হয়েছে বর্তমান নেতৃত্বের পরবর্তী প্রজন্মের মুখকে। জেলা কমিটিতে সংখ্যালঘু, আদিবাসী এবং মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করে ভারসাম্য রক্ষারও চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে নতুন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে কতগুলি নতুন মুখ আনা হয় সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। ১৯ ও ২০ জানুয়ারি মালদহে সিপিএমের ২৩তম জেলা সম্মেলন হয় টাউন হলে। সম্মেলনে হাজির ছিলেন দলের পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম সহ তিন জন রাজ্য নেতা। দু’দিনের সম্মেলনের শেষে ৫০ জনের জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা সম্পাদক হিসেবে আবারও নির্বাচিত হয়েছেন অম্বর মিত্র। তিনি বর্তমানে জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন।
অম্বরবাবু বলেন, আগের জেলা কমিটি ছিল ৫৮ জনের। কিন্তু এবার কয়েকজন সদস্য সংখ্যা কমান হয়েছে। নতুন জেলা কমিটিতে ৩০ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সি ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য স্থান পেয়েছেন। জেলা কমিটিতে সংখ্যালঘু সদস্য রাখা হয়েছে ২০ জন বা ৪০ শতাংশ। মহিলা রয়েছেন সাত জন। এছাড়া চার জন আদিবাসী মুখও রয়েছেন নতুন জেলা কমিটিতে। সংখ্যালঘু মহিলা মুখকেও নতুন জেলা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সমাজের সব অংশের প্রতিনিধিদের সুষম নির্বাচনের মধ্যে দিয়েই নতুন জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
তবে এবার জেলা কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বনাথ ঘোষ, জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি রঞ্জিত চক্রবর্তী, প্রবীণ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন সহ বেশ কয়েকজন। তবে তাঁদের জেলা কমিটিতে স্থায়ী আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। নতুন জেলা কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন সিটু নেতা নুরুল ইসলামও। পার্টি কংগ্রেসের পরে এপ্রিল মাসে দলের নতুন জেলা সম্পাদকমণ্ডলী গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন অম্বরবাবু।
উল্লেখ্য, ৩৪ বছরের বাম জমানায় মালদহেও সিপিএমের উল্লেখযোগ্য শক্তি বৃদ্ধি হয়েছিল। কংগ্রেসের সঙ্গে তীব্র রাজনৈতিক ও নির্বাচনী লড়াই থাকলেও বিধানসভা, পুরসভা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনে একচ্ছত্র দাপট ছিল সিপিএমের। তবে এত দাপট সত্ত্বেও একবারও মালদহ থেকে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হতে পারেনি সিপিএম।
রাজ্যের শাসন ক্ষমতা হারানোর পরে মালদহেও ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে সিপিএম। অনেক প্রথম সারির সিপিএম জনপ্রতিনিধি তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। আঙুল উঠেছে দলের জেলা নেতৃত্বের দিকে। দলের অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রজন্মকে ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে এবার জেলা কমিটির নতুন সদস্যদের নিয়ে এনে ভিন্ন পথে হাঁটতে চায় কিনা দল এখন তা নিয়েই জোর চর্চা চলছে সিপিএম সদস্যদের মধ্যে।