‘হার বুঝতে পেরে বড় বড় নেতারা বাংলা ছেড়ে পালাতে শুরু করেন’ বিস্ফোরক জয়প্রকাশ
নতুন কমিটি নিয়ে এখনও পর্যন্ত কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনায় আটকে থাকা বিদ্রোহ যাতে অন্য জেলায় ছড়িয়ে না পড়ে, তা রুখতে মরিয়া রাজ্য বিজেপি। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিদ্রোহ নিয়ে বেশি সরব দুই প্রাক্তন রাজ্য নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার ও রীতেশ তিওয়ারিকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাতেও আস্বস্ত না হয়ে দু’জনকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করেছে দল। কিন্তু তাতেও যে কাজ হচ্ছে না সেটা বুঝিয়ে মঙ্গলবার প্রকাশ্যে দলীয় নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন রীতেশ, জয়প্রকাশরা। তাঁদের দাবি, গোটা বাংলাতেই নেতা, কর্মীদের মধ্যে নতুন রাজ্য কমিটি নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এখন তাই বর্তমান রাজ্য নেতারা পারলে জেলা সফর করে দেখান। তাঁরা কোনও বিক্ষোভের মুখে পড়বেন কি না, সে উত্তর না দিয়ে রীতেশদের আরও দাবি, ক্ষমতা থাকলে বর্তমান নেতৃত্ব বিদ্রোহীদের রাজ্য জুড়ে যে কর্মসূচি রয়েছে, তা রুখে দেখান। জয়প্রকাশ বলেন, ‘‘রাজ্যে বিজেপি-কে দুর্বল করার চেষ্টা দলেরই একাংশের, আগেই দিল্লিকে জানিয়েছি।’’
সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে জয়প্রকাশ বলেন, ‘‘বিজেপি একটা অংশ রাজ্যে দলকে দুর্বল করতে চায়। সেই উদ্যোগের পরিণতি ২০১৯ সালে লোকসভায় ১৮ আসনে জেতা বিজেপি খারাপ ফল করে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে। অন্য দলের নেতাদের নিয়ে এসে বাজিমাৎ করার চেষ্টা শুরু হয়। ভিন রাজ্যের নেতাদের নিয়ে এসে বাংলা দখলের কথা বলা হয়। এটা ভুল হচ্ছে বলে আমি আগেই জানিয়েছি।” ২ মে ফল ঘোষণার দিন বিধানসভা ভোটে হার বুঝতে পেরেই বিজেপি-র বড় বড় নেতারা বাংলা ছেড়ে পালাতে শুরু করেন বলে দাবি করেন জয়প্রকাশ। তিনি বলেন, “দিনের শেষে সাংবাদিক বৈঠকে উত্তর দেওয়ার সময় আমি ছাড়া কেউ ছিলেন না। ১১ জুন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি মুকুল রায় যখন তৃণমূলে ফিরে যান তখন অন্য কোনও নেতাকে সামনে দেখা যায়নি। সাংবাদিকদের সামনে আমাকেই এগিয়ে দেওয়া হয়।’’
২ মে ফল ঘোষণার দিন বিধানসভা ভোটে হার বুঝতে পেরেই বিজেপি-র বড় বড় নেতারা বাংলা ছেড়ে পালাতে শুরু করেন বলে দাবি করেন জয়প্রকাশ। তিনি বলেন,‘‘দিনের শেষে সাংবাদিক বৈঠকে উত্তর দেওয়ার সময় আমি ছাড়া কেউ ছিলেন না। ১১ জুন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি মুকুল রায় যখন তৃণমূলে ফিরে যান, তখন অন্য কোনও নেতাকে সামনে দেখা যায়নি। সাংবাদিকদের সামনে আমাকেই এগিয়ে দেওয়া হয়।’’
রাজ্য বিজেপি-র নিন্দা করতে গিয়ে জয়প্রকাশ দাবি করেন, বিধানসভা নির্বাচনের বিপর্যয় নিয়ে দলে কোনও আলোচনা হয়নি। যাঁরা আলোচনা করতে চেয়েছেন, তাঁদের বৈঠকে কথা বলতে দেওয়াই হয়নি। জেলায় জেলায় কর্মীরা মার খেলেও তাঁদের পাশে না দাঁড়িয়ে আদালতে গিয়েছে দল। তাতে কর্মীদের মনোবল ভেঙে গিয়েছে বলে দাবি করে জয়প্রকাশ জানান, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে তিনি বারবার এ নিয়ে জানিয়েছিলেন। বর্তমান নেতাদের আক্রমণ করে জয়প্রকাশ বলেন, ‘‘কাচের ঘরে বসে যাঁরা অন্যদের দিকে ঢিল ছুড়ছেন, তাঁরা সাধারণ কর্মীদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘এখনও সময় রয়েছে। যদি আত্মকেন্দ্রিকতা ভুলে বর্তমান দায়িত্বশীলরা সাধারণ কর্মীদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান, বাংলার মানুষের পাশে যান। তবে দল ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।’’ একই সঙ্গে তাঁর আক্রমণ ছিল বিদ্যার্থী পরিষদ থেকে বিজেপি-তে এসে দায়িত্ব পাওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে। প্রসঙ্গত, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন), সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়-সহ অনেকেই বিদ্যার্থী পরিষদের প্রাক্তনী। তাঁদের দিকে আক্রমণ ছুড়ে দিয়ে জয়প্রকাশ বলেন, ‘‘এখন রাজ্যে স্কুল, কলেজ খোলা নিয়ে প্রাক্তন ছাত্রনেতাদের আন্দোলনে নামা উচিত।’’
এর আগে বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন রীতেশ, জয়প্রকাশরা। সেই সব কথা দলবিরোধী অভিযোগ তুলেই তাঁদের কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে রাজ্য বিজেপি। কিন্তু এ বার সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত জানার পরে সংগঠিত ভাবে দলের বিরোধিতা নিয়ে। কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহীদের কর্মসূচি ঘোষণা করলেন তাঁরা। মঙ্গলবার জয়প্রকাশ সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই বলেন, বুধবার সাধারণতন্ত্র দিবসের দিন থেকেই বিদ্রোহীদের কর্মসূচি শুরু হচ্ছে।