অমিত মালব্য ও অমিতাভ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন রীতেশ
ফের বিস্ফোরক রীতেশ তিওয়ারি (Ritesh Tiwari)। সদ্যই জেলায় নতুন পরিচালন কমিটি ঘোষণা করেছে বিজেপি (Bengal BJP)। কিন্তু, নতুন কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ফের বিরোধের সূত্রপাত। একদিকে যখন রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে বিরোধ মিটছে না, তখন যেন সেই আগুনে ঘৃতাহুতি দল থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া নেতা রীতেশের। টুইটে উগড়ে দিলেন ক্ষোভ সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী ও অমিত মালব্যর বিরুদ্ধে।
রীতেশ একটি টুইটে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীকে ‘ভার্চুয়াল চক্রবর্তী’ এবং অমিত মালব্যকে ‘টুইটার মালব্য’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি। টুইটে আরও লেখেন, “ভার্চুয়াল চক্রবর্তী ও টুইটার মালব্যর বঙ্গ বিজেপি অসাধারণ! যে ভাস্কর দে ৬ মাস আগে দল ছেড়ে গিয়েছিল তাঁকেই আবার আলিপুরদুয়ার বিজেপি জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচন করা হয়েছে। লজ্জা…।”
রীতেশের ক্ষোভের কারণ
রীতেশের এই টুইটেই কার্যত রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বস্তুত, দল থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পরেই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন রীতেশ। জানিয়েছিলেন, তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। এ ক্ষেত্রে লড়াইটা যে আদি বিজেপি বনাম নব্য বিজেপি – সেই কথাও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। রীতেশের কথায়, আগে যারা পার্টিকে প্রতিষ্ঠা করেছে, তাদের সরানোর অভিসন্ধি কাজ করছে। যদিও এই ঘটনার সঙ্গে বঙ্গ বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি যুক্ত নন বলেই মনে করেছেন বিক্ষুব্ধ নেতা।
সরাসরি অমিতাভ চক্রবর্তী ও অমিত মালব্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন রীতেশ। তাঁর বক্তব্য, “অমিতাভ চক্রবর্তী ও অমিত মালব্য বিজেপিকে যে ধ্বংস করতে চাইছে তার উত্তর বুথ স্তরের বিজেপি কর্মীরা দেবে। এরা তৎকাল বিজেপি। এরা কতদিন থাকবে তার ঠিক নেই। এরা দলের কোনও নেতাই নয়। লড়াই তৃণমূলের বিরুদ্ধে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে হচ্ছে।
অমিতাভ ও অমিত মালব্যর বিরুদ্ধে যে ক্ষোভের উপশম এখনও হয়নি তা স্পষ্ট বোঝা গেল ফের রীতেশের টুইটে। একইসঙ্গে, তাঁর টুইট নিয়ে জল্পনাও শুরু হয়েছে। যেভাবে দলের সিদ্ধান্তকে ‘লজ্জা’ বলে চিহ্নিত করেছেন রীতেশ তাতে যেন ফুলবদলের ইঙ্গিতটাই বেশি স্পষ্ট এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। যদিও রীতেশের স্পষ্ট দাবি, তিনি বিজেপিতেই থাকতে চান। দলের ‘খারাপ সময়ের’ নেতা তিনি। পদের লোভে দলে আসেননি।
আলিপুরদুয়ার জেলা বিজেপি পরিচালন কমিটি নিয়ে বিরোধ কোথায়?
বস্তুত, বুধবারই প্রকাশিত হয়েছে আলিপুরদুয়ারের নতুন জেলা বিজেপি কমিটি। সেই কমিটিতে নাম রয়েছে ভাস্কর দের। শুধু তাই নয়, ভাস্কর ওই তালিকায় সহ-সভাপতি পদে নিযুক্ত হয়েছেন। প্রথমদিকে না বুঝতে পারলেও পরবর্তীতে ভাস্করবাবু ফোন নম্বর মিলিয়ে দেখেন, তাঁর নামই রয়েছে।
এরপরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি। নিজেই একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে তাতে ক্ষোভ উগড়ে দেন ভাস্কর। তাতে বলেন, “আমি এতদিন হল দল ছেড়েছি। কেন একবছর পর জেলা কমিটিতে আমার নাম রাখা হবে? আমি বিজেপির মতো দলের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখতে চাই না। যে দলে টাকার বিনিময়ে টিকিট দেওয়া সেখানকার কোনও পদ আমার চাই না। আমি মানুষের উন্নয়নের পক্ষে।”
এই ঘটনায় যথারীতি প্রশ্ন উঠছে পদ্ম শিবিরের সাংগঠনিক পরিকাঠামোয়। কোন নেতা দল ছেড়েছেন, কোন নেতা দলে রয়েছেন সেই কোনও হিসেবই কি রাখে না রাজ্য নেতৃত্ব? পাশাপাশি, এই তালিকা ঘোষণায় স্পষ্ট, বাংলায় অন্তত বিজেপির অন্দরের আদি-নব্য দ্বন্দ্ব কেবল নয়, সমন্বয়ের অভাবও রয়েছে। রাজ্য ও জেলা পরিচালন কমিটি যে পরস্পরের মধ্যে কোনও যোগাযোগ বা মত বিনিময় করে না তাও স্পষ্ট এই ঘটনায় এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাহলে কি সর্ষের মধ্যেই ভূত? তৃণমূল থেকে আসা নেতাদের দলে অত্যধিক প্রাধান্যই কি বিজেপির অন্দরে ঘুণ ধরাচ্ছে? উঠছে প্রশ্ন। যদিও, রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের তরফে এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।