রাজ্যের সরকারি স্কুলে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সি পড়ুয়াদের প্রায় ৭৫% পেয়েছে কোভিড টিকা!
১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সি স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে কোভিড টিকাদানের যে রিপোর্ট রাজ্য সরকার শুক্রবার হাইকোর্টে জমা দিয়েছে, তা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। দক্ষিণবঙ্গের শিল্পাঞ্চল পশ্চিম বর্ধমানের সরকারি স্কুলগুলি ছাড়া রাজ্যের সর্বত্র জোরদার গতিতেই চলছে টিকাকরণ। এ ক্ষেত্রে আবার দক্ষিণবঙ্গকে টেক্কা দিয়েছে উত্তরবঙ্গের স্কুলগুলি। তবে, কেন্দ্রের লক্ষ্য রয়েছে, জানুয়ারির মধ্যে ১৫-১৮ বছর বয়সিদের টিকার প্রথম ডোজ শেষ করা। সেই অর্থে হাতে আর তিন দিন রয়েছে। ফলে, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সেই লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভব না হলেও বঙ্গে টিকাকরণেই হার সন্তোষজনক।
উল্লিখিত বয়সসীমার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে করোনা টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে ৩ জানুয়ারি থেকে। স্কুল শিক্ষা দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের প্রতিষেধক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে উত্তরবঙ্গ। অবশ্যই তা শতাংশের নিরিখে।
টিকাদানের হারে জেলাগুলির মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে কালিম্পং। সবচেয়ে খারাপ ফল পশ্চিম বর্ধমানের। রাজ্যজুড়ে শিক্ষা দপ্তরের অধীনে এখনও পর্যন্ত টিকা প্রাপকের হার ৭৪.৮৭ শতাংশ। রাজ্যে ৪৫ লক্ষ ৩৯ হাজার ৮১১ জন পড়ুয়ার মধ্যে টিকা পেয়েছে ৩৩ লক্ষ ৯৯ হাজার ১৭০ জন পড়ুয়া।
২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত টিকাদানে সবচেয়ে এগিয়ে কালিম্পং। সেখানে প্রতিষেধক প্রাপকের হার ৯৮.২ শতাংশ। ৩৮টি স্কুলের মধ্যে সবক’টিতেই টিকা দেওয়া হয়েছে। ওই জেলায় ১৩ হাজার ৫৩৯ জন পড়ুয়াদের মধ্যে টিকা পেয়েছে ১৩ হাজার ২৯৭ জন।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কোচবিহার। ওই জেলায় ৯৬.৪৬ শতাংশ পড়ুয়া টিকা পেয়েছে। ৯২ শতাংশ পড়ুয়াদের টিকা দিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আলিপুরদুয়ার।
দক্ষিণবঙ্গে স্কুলস্তরে টিকাপ্রাপকের ভিত্তিতে শীর্ষে রয়েছে পুরুলিয়া। ওই জেলায় টিকা প্রাপকের হার ৮৯.৮২ শতাংশ। ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৮০৯ জন পড়ুয়াদের মধ্যে টিকা পেয়েছে ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৫৫ জন। বেশিরভাগ স্কুলেই প্রায় শেষ পর্যায়ে চলছে টিকাদান। পুরুলিয়ার পরেই রয়েছে মুর্শিদাবাদ। সেখানে টিকা পেয়েছে ৮৬.৩৮ শতাংশ পড়ুয়া। তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাঁকুড়া। ৮৪.৫ শতাংশ পড়ুয়া টিকা পেয়েছে ওই জেলায়।
দক্ষিণবঙ্গে টিকাপ্রাপ্তির হারে চতুর্থ স্থানে রয়েছে কলকাতা। কলকাতা কর্পোরেশন টিকা দিতে পেরেছে ৮৩.৩ শতাংশ পড়ুয়াকে। সেখানে ১ লক্ষ ১৯ হাজার ৮৭৭ জন পড়ুয়াদের মধ্যে টিকা দেওয়া হয়েছে ৯৯ হাজার ৮১৯ জন পড়ুয়াকে। ৩১টি স্কুলে টিকা দেওয়ার কাজ চলছে। কলকাতার পরেই রয়েছে হাওড়া। সরকারি স্কুলের ৮০ শতাংশ পড়ুয়াকে টিকা দেওয়া হয়েছে ওই জেলায়। ২ লক্ষ ১৪ হাজার ৩৯৪ জন পড়ুয়াদের মধ্যে ১ লক্ষ ৭২ হাজার ১৩৯ জন পড়ুয়া টিকা পেয়েছে হাওড়ায়। পূর্ব মেদিনীপুরে টিকা পেয়েছে ৭৯.৬৭ শতাংশ পড়ুয়া। হুগলিতে টিকা দেওয়া হয়েছে ৭৭.৭২ শতাংশ পড়ুয়াকে।
শিলিগুড়িতে ১৫-১৮ বছর বয়সি ৭৪ শতাংশ পড়ুয়া টিকা পেয়েছে। সেখানে ৫৬ হাজার ২১৫ জন পড়ুয়াদের মধ্যে টিকা পেয়েছে ৪১ হাজার ৩৮৫ জন পড়ুয়া। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় টিকা পেয়েছে ৭৩ শতাংশ পড়ুয়া। তার পরেই রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর। ওই জেলায় ৭২.৮১ শতাংশ পড়ুয়া টিকা পেয়েছে। ২ লক্ষ ৫৮ হাজার ৮৮৬ জন পড়ুয়ার মধ্যে টিকা পেয়েছে ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৫১৭ জন পড়ুয়া। বীরভূমে টিকা পেয়েছে ৭১.৯১ শতাংশ পড়ুয়া। পূর্ব বর্ধমান টিকা দিতে পেরেছে ৭১ শতাংশ পড়ুয়াকে। নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনায় টিকা পেয়েছে ৭০ শতাংশ পড়ুয়া। ঝাড়গ্রাম টিকা দিতে পেরেছে ৬৯.৭৭ শতাংশ পড়ুয়াকে। দক্ষিণ দিনাজপুর ও উত্তর দিনাজপুরে যথাক্রমে ৬৭ শতাংশ ও ৬৩.৬৮ শতাংশ পড়ুয়া। খারাপ ফলের দিকে শীর্ষে রয়েছে পশ্চিম বর্ধমান। মাত্র ৩৭ শতাংশ পড়ুয়া টিকা পেয়েছে ওই জেলায়। ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৩১২ জন পড়ুয়ার মধ্যে টিকা পেয়েছে ৪৬ হাজার ৮৪২ জন।
অবিলম্বে স্কুল খোলার দাবিতে রাজ্যজুড়ে জোরদার আন্দোলন শুরু হয়েছে। রাজ্য সরকার স্কুল খুলতে আগ্রহী হলেও সমস্ত পড়ুয়া এখনও ভ্যাকসিন পায়নি। ফলে, রাজ্য সরকার এখনও স্কুল খোলার ঝুঁকি নিতে পারছে না।