দেশে বাড়ছে বেকারত্ব, মেরুকরণের রাজনীতি ছাড়ুন! দলের অন্দরে দাবিতে প্রবল অস্বস্তিতে বিজেপি
২০১২-তে উত্তরপ্রদেশের স্নাতকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ২১ শতাংশ। যোগী আদিত্যনাথের জমানায় ২০১৯-এ তা ৫১ শতাংশে পৌঁছেছে। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমাধারীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৬ শতাংশ হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রিধারীদের মধ্যে বেকারত্ব ১৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৬ শতাংশ। উচ্চমাধ্যমিক পাশ চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে বেকারত্ব বেড়েছে চার গুণ।
আজ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ভোটের প্রচারে বিরোধীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘ওরা জিন্নার উপাসক, আমরা সর্দার পটেলের পূজারি। ওদের পাকিস্তান প্রিয়, আমরা ভারতমাতার জন্য প্রাণ দিই।’’ যোগী যখন মেরুকরণের রাজনীতি করছেন, তখন তাঁর রাজ্যেরই বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধীর মন্তব্য, বেকারত্ব দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে উঠছে। পরিস্থিতি গুরুতর হচ্ছে। এর থেকে নজর সরিয়ে রাখা তুলো দিয়ে আগুন নেভানোর সমান।
রেলের চাকরিতে নিয়োগ নিয়ে গত দশ দিন ধরে উত্তরপ্রদেশ, বিহারে চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ চরমে উঠেছে। উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের মুখে তরুণ প্রজন্মের এই বিক্ষোভকে হাতিয়ার করে বিরোধীরা বিজেপি নেতৃত্বকে নিশানা করছিলেনই। এ বার দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করায় বিজেপি নেতৃত্ব প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছেন।
অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর বক্তব্য, রাজনীতি করে মানুষের মধ্যে মেরুকরণ করা হলে অর্থনীতিরই ক্ষতি হয়। উত্তরপ্রদেশের তরুণরা ক্রুদ্ধ, তাঁরা পরিবর্তন চাইছেন। কারণ উত্তরপ্রদেশে বেকারত্বের ২০২১-এ ২৩.২ শতাংশ ছিল। যথেষ্ট চড়া। দেশের গড়ের থেকে অনেক বেশি। কোভিডের আগেই সমস্যা শুরু হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে বেকারত্বের হার ২০১৮-য় ৫.৯%, ২০১৯-এ ৯.৯% ছিল।
বরুণের মতো কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও রেলের চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভের ভিডিয়ো টুইট করেছেন। এই ভিডিয়োতে এক চাকরিপ্রার্থী বলছেন, ‘‘রেলের চাকরির জন্য ১.২৭ কোটি জন আবেদন করেছেন বলে রেলমন্ত্রী সমস্যার কথা বলছেন। এত জন বেকার কেন, তা উনি বলছেন না। আগের থেকে অনেক বেশি আবেদন জমা পড়ছে যখন তখন বেকারত্বও বেড়েছে।’’ ওই চাকরিপ্রার্থীর মতে, সরকারি ক্ষেত্রে রেলে সবচেয়ে বেশি চাকরি হয়। সেই রেলেরই বেসরকারিকরণ করা হচ্ছে। চাকরিপ্রার্থীরা সরকারকে নীতি বদলানোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছেন, ছাত্র-যুবরা রাস্তায় নামলে শাসককেও রাস্তায় নামিয়ে আনবে। রাহুলের বক্তব্য, ‘‘কে বলেছিল এখন ‘অচ্ছে দিন’ এসেছে? ছাত্রদের কথা সঠিক, তাঁদের যন্ত্রণাও সত্যি।’’
বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর যুক্তি, ‘‘মোদী সরকার রেলের বেসরকারিকরণের পরিকল্পনা করছে বলে খবর ছড়ানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এর জন্যই রেলের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা চলছে। সরকারকে অবস্থান স্পষ্ট করতে সতর্ক করছি। না হলে তরুণ প্রজন্মের বিক্ষোভ-হিংসা এড়ানো যাবে না।’’
বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, অখিলেশ যাদবের সরকারের আমলে উত্তরপ্রদেশে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৯%। কোভিডের বছর বাদ দিলেও যোগী জমানায় বৃদ্ধির হার ৪.৮%-এ নেমে এসেছে। মাথা পিছু আয় বেড়েছে মাত্র ৯.২% হারে। অখিলেশের আমলে তা ২৭.৬% ছিল। উচ্চমাধ্যমিক পাশদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২০১২-তে ৪% ছিল। এখন তা ২৪%। এই কারণেই যোগীকে জিন্না, পাকিস্তানের নাম টেনে আনতে হচ্ছে।