বিপাকে কেন্দ্র, দিল্লিতে প্রস্তাবিত মূর্তিতে আপত্তি তুলে ফের মোদীকে চিঠি নেতাজির পরিবারের
নেতাজি সুভাষকে নিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। সাধারণতন্ত্র দিবসে রাজধানীর কুচকাওয়াজে নেতাজিকে নিয়ে রাজ্য সরকার যে ট্যাবলো তৈরি করেছিল, তাকে কেন্দ্র শামিল না হতে দেওয়ায় বিতর্ক চরমে উঠেছে। তাতে ঘৃতাহুতি দিয়েছে নেতাজিকে সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে গঠিত জাতীয় কমিটির বৈঠক না হওয়ার বিষয়টি। এই সব বিতর্ক ধামাচাপা দিতে গত ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের সামনে নেতাজির পূর্ণাবয়ব মূর্তি বসানোর কথা ঘোষণা করেন। সেদিন সন্ধ্যায় সেখানে লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে সুভাষচন্দ্রের একটি ‘হলোগ্রাম’ মূর্তির উদ্বোধন করেন তিনি। কিন্তু সেই হলোগ্রাম মূর্তি নিয়েই দেখা দিয়েছে নয়া বিতর্ক। খোদ নেতাজির পরিবারই এই বিতর্কের অবতারণা করেছে। ইতিমধ্যেই পরিবারের তরফে চিঠি পাঠানো হয়েছে মোদীকে। একইসঙ্গে এই ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকের দাবিও তোলা হয়েছে।
মূর্তি নিয়ে আপত্তি কোথায়? আপত্তি কেন, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন পরিবার ও নেতাজি আন্দোলনের অন্যতম কর্মী তথা সুভাষচন্দ্রের নাতি চন্দ্রকুমার বসু। তিনিই চিঠিটি পাঠিয়েছেন মোদীকে। শুক্রবার তিনি বলেন, নেতাজির মূর্তি বসানোর সিদ্ধান্তকে আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে স্বাগত জানিয়েছি। কিন্তু হলোগ্রাম মূর্তিতে নেতাজির স্যালুট দেওয়ার ভঙ্গি তাঁর মতো ব্যক্তিত্ববান দেশনায়কের সঙ্গে খাপ খায়নি। শুধু পরিবারের সদস্যরাই নন, জাভেদ আখতার সহ সুভাষ অনুগামী বহু মানুষ একই মত ব্যক্ত করেছেন। পাথরের মূর্তিও হলোগ্রামের মতো হবে বলে শুনেছি। তাই আমরা এব্যাপারে আমাদের আপত্তির কথা জানিয়ে দ্রুত ওই কমিটির বৈঠক ডাকার অনুরোধ জানিয়েছি প্রধানমন্ত্রীকে।
পরিবারের এই মতের সঙ্গে একমত নেতাজির কন্যা অনিতা বসু পাফও। তিনিও মূর্তিটি একটু অন্যরকম করার পক্ষপাতী। বসু পরিবারের সদস্যরা চেয়েছিলেন, কলকাতার রেড রোডের মতো নেতাজির ‘দিল্লি চলো’ স্লোগান তোলা লড়াকু মেজাজের মূর্তি তৈরি হোক। কিন্তু ইন্ডিয়া গেটের সামনে যে ক্যানপি বা ছাদনার ভিতরে মূর্তিটি থাকবে, তাতে সামনের দিকে হাত তোলা মূর্তি বসানো সম্ভব হবে না। তাই বিকল্প হিসেবে তাঁরা চান, ১৯৪৩ সালে সিঙ্গাপুরে প্রথম আজাদ হিন্দ সরকারের কথা ঘোষণা করার সময় নেতাজির যে লড়াকু চেহারা ফুটে উঠেছিল, সেই ছবির আদলেই তৈরি হোক মূর্তি। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট ভাস্করের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে ফোনে একপ্রস্থ কথাও হয়েছে চন্দ্রবাবুর। পরিবারের তরফে কয়েকজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, চিত্রকর ও ভাস্করকে নিয়ে একটি কমিটি গড়ে এবিষয়ে তাঁদের স্বাক্ষরিত প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়েছে।