এক ক্লিকেই জানতে পারবেন ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের খুঁটিনাটি, নয়া অ্যাপ আনছে রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর
মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করতে গিয়ে হয়রানি, ছোটাছুটি, হাজার জায়গায় ফোন— এই চিরপরিচিত ভোগান্তির চিত্রে বদল আনতে চাইছে রাজ্য সরকার। বাংলার মানুষের হাতের কাছে কোন ব্লাড ব্যাঙ্কে কোন গ্রুপের রক্ত কতটা আছে, তা মিনিটে মিনিটে জানাতে আসছে নয়া অ্যাপ। ফেব্রুয়ারি মাসেই চালু হবে এই অ্যাপ, এমনটাই জানিয়েছেন রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের রক্ত নিরাপত্তা শাখার যুগ্ম অধিকর্তা ডাঃ গোপাল বিশ্বাস। তিনি বলেন, ওই অ্যাপের সফটওয়্যারের শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। আশা করছি, ফেব্রুয়ারিতেই চালু করা যাবে সেটি। সূত্রের খবর, প্রতি মিনিটে বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের স্টকের চিত্র তুলে ধরাই নয়, অ্যাপের মাধ্যমে রক্তদান শিবির এবং রোগীর পরিজনের হাতে রক্ত তুলে দেওয়ার অংশটুকু বাদে গোটা পরিষেবাই চলে আসবে অনলাইনে।
প্রসঙ্গত, বেশ কয়েক বছর ধরেই রক্ত নিয়ে সাধারণ মানুষের হয়রানি বন্ধ করতে স্মার্ট সলিউশন খুঁজছে রাজ্য। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আনা হয়েছিল ‘জীবনশক্তি’ পোর্টাল। ১ সেপ্টেম্বর সেটির উদ্বোধন করেন মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাজ ছিল সেই একই— চটপট বলে দেওয়া কোথায়, কোন গ্রুপের রক্ত কতটা আছে। শুরুতে প্রচুর আশা জাগালেও, কয়েক মাসের মধ্যেই প্রযুক্তিগত কারণে অ্যাপটি সমালোচিত হতে থাকে।
এই জাতীয় পরিষেবাভিত্তিক অ্যাপের সবচেয়ে বড় গুণ হওয়া উচিত ‘রিয়েল টাইম’ তথ্য। আর সেটাই পাওয়া যাচ্ছিল না। দিনে মাত্র একবার করে রক্তের স্টকের তথ্য আপডেট করা হচ্ছিল। অ্যাপের উপর ভরসা করে ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে মাথায় হাত পড়ছিল মানুষের।
গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে সেই অ্যাপের রিভিউ পড়লেই বোঝা যায়, অধিকাংশ ব্যবহারকারী ওই উদ্যোগের প্রশংসা করলেও ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চাওয়া, রিয়েল টাইপ তথ্য না পাওয়া সহ নানা বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করতে ছাড়েননি। সেকথা মেনে নিয়েছেন যুগ্ম স্বাস্থ্য অধিকর্তাও। বলেন, এইবার নতুন সফটওয়্যার দেওয়া হচ্ছে। প্রতি মিনিটে তথ্য মিলবে।
সূত্রের খবর, নয়া অ্যাপে দু’টি অংশ থাকবে। একটি নাগরিকদের জন্য। অন্যটি ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্মী-আধিকারিক বা স্বাস্থ্যভবনের অফিসারদের জন্য। নাগরিকদের জন্য অংশে রাজ্যের ৮৭টি ব্লাড ব্যাঙ্ক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির থেকে কত দূরে আছে, তা গুগল ম্যাপের মতোই দেখা যাবে। বিভিন্ন গ্রুপের রক্ত কখন, কতটা আছে, দেখা যাবে তাও।
রাজ্যে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে অনলাইন পরিষেবা জোরদার হচ্ছে। আধিকারিক-কর্মীরা রক্তের ই-রিক্যুইজিশন মুহূর্তের মধ্যে পাঠিয়ে দিতে পারবেন অন্য ব্লাড ব্যাঙ্কে। সেই তথ্য থাকবে অ্যাপে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে রক্তদান শিবির থেকে কত রক্ত সংগ্রহ হল, তাও থাকবে অ্যাপে। সেই রক্ত পরীক্ষার পর কী কী রোগ ধরা পড়ল বা পড়ল না, আধিকারিকরা নিজেদের ইউজার আইডি দিয়ে অ্যাপে ক্লিক করা মাত্র জানতে পারবেন। কত রক্ত ব্লাড ব্যাঙ্কে এল, রোগীকে দেওয়ার পর কত রইল, আপডেট করতে থাকবে অ্যাপ। এক কর্তার ভাষায়, অ্যাপটি যদি ঠিকমতো কাজে লাগানো যায়, রক্ত পরিষেবায় দালালরাজ ভাঙা অসম্ভব কিছু নয়।