বিজেপি’র বিদায়ের ঘণ্টা বেজে গেছে, তাই গান্ধীজিকে নিয়ে বাঁচার প্রয়াস: তৃণমূল
মহাত্মা গান্ধীর প্রয়াণ দিবসে বিজেপিকে চড়া সুরে বিঁধল তৃণমূল। জোড়াফুল শিবিরের পক্ষ থেকে গেরুয়া শিবিরকে মনে করিয়ে দেওয়া হল, আজ গান্ধীজির প্রয়াণ দিবস পালন করছেন বিজেপি নেতারা, কিন্তু তাঁরা ভুলে গিয়েছেন নাথুরাম গডসে কীভাবে হত্যা করেছিলেন জাতির জনককে। আসলে বিজেপি নেতাদের এখন গান্ধী স্মরণ পুরোটাই লোক দেখানো। তৃণমূল মনে করছে, দেশে বিদায়ের ঘণ্টা শুনতে পাচ্ছেন বিজেপি নেতারা। তাই শেষমেশ গান্ধীজিকে স্মরণ করে বাঁচার চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা।
১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যাকারী ছিলেন নাথুরাম গডসে। রবিবার মহাত্মা গান্ধীর প্রয়াণ দিবস পালন করা হয় দেশজুড়ে। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গান্ধীজির শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তাই তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ফেসবুকে মমতা পোস্ট করেছেন, ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে সম্প্রীতির ভাষা, জাতির প্রাণে জাগালো আশা।’ মহাত্মা গান্ধীর প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার মেয়ো রোডে গান্ধীজির মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানান রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এছাড়াও বেলেঘাটায় গান্ধী ভবনে গিয়ে শ্রদ্ধা অর্পণ করেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
এদিন গেরুয়া শিবিরকে বিশেষ মাত্রায় গান্ধী স্মরণ করতে দেখা গিয়েছে। যা নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েনি তৃণমূল। সামনেই রাজ্যে চারটি পুরসভার নির্বাচন। তারপর আরও শতাধিক পুরসভার ভোট। সেই সঙ্গে রয়েছে আসন্ন পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। ফলে ভোটের এই আবহে গেরুয়া বাহিনীর গান্ধীজি স্মরণের পিছনে অন্য কারণ দেখছে তৃণমূল শিবির।
রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, দেশে বিজেপির বিদায় ঘণ্টা বেজে গিয়েছে, তাই এখন গান্ধীজিকে ধরে বাঁচার প্রয়াস চালাচ্ছে তারা। একইসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, যদি গান্ধীজির প্রয়াণে বিজেপি অনুতপ্ত হয়, তাহলে আজ তাদের উচিত গডসে ধিক্কার দিবস পালন করা।
পাশাপাশি ব্রাত্য বসু দাবি করেছেন, গান্ধীজিকে যারা গুলি করে হত্যা করল, তাদের উত্তরাধিকারীরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতেই পারে, এক্ষেত্রে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে তাদের বলা উচিত, গডসে ও তার দল সেদিন অন্যায় করেছিল।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ইস্যুতে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপির উপর চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে ফোনে আড়িপাতা, কৃষক আন্দোলন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে আঘাত, বাংলার তরফে দেওয়া নেতাজির ট্যাবলো বাতিল, আমলাদের রদবদল সহ একাধিক ঘটনায় বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়িয়েছেন তৃণমূলের নেতারা। এমনকী দেশজুড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এই অবস্থায় বাংলায় পুরভোট এবং দেশের পাঁচ রাজ্যের ভোটে বিজেপি বেশ খানিকটা কোণঠাসা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। ফলে গান্ধীজিকে স্মরণ করলেও বিজেপির কোনও লাভ হবে না বলে মনে করেন তৃণমূল নেতারা। তাঁদের দাবি, দেশের মানুষ বিজেপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এখানেই তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, গান্ধীজিকে হত্যা করেছিল নাথুরাম গডসে। অনেকে বলেন নাথুরাম একসময় আরএসএসের সদস্য ছিলেন। সেই কলঙ্কমোচনে এখন বিজেপি নেতারা নানা কর্মসূচি নিচ্ছেন। আসলে গান্ধীজির মৃত্যুদিন পালন করার কোনও নৈতিক অধিকারই নেই তাঁদের।