মেরুকরণের জের, উত্তরপ্রদেশে দোকানের নাম পাল্টাতে বাধ্য করা হল মুসলিম ব্যবসায়ীকে
সবকা সাথ, সবকা বিকাশ—শুধুই মুখোশ। মুখ আসলে মেরুকরণ! উত্তরপ্রদেশে ভোট যতই এগিয়ে আসছে মেরুকরণ রাজনীতিতেই শান দিচ্ছে গেরুয়া শিবির। কখনও প্রকাশ্যে, কখনও রেখেঢেকে, বিভাজনের আগুনে ঘি ঢালছে যোগী অনুগামীরা। অযোধ্যর পাশাপাশি মথুরার মন্দির-মসজিদ ইস্যুও খুঁচিয়ে তোলা হচ্ছে। যার ফলে ওই এলাকার মুসলিম ব্যবসায়ীরা ফাঁপরে পড়ে ত্রাহি ত্রাহি রব তুলেছেন। গত বছর যোগী আদিত্যনাথ মন্দির চত্বরের তিন কিলোমিটারের মধ্যে মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। যার ফলে মথুরার ধর্মীয় স্থানে মুষ্টিমেয় যে ক’জন মুসলিম ব্যবসায়ীর দোকান রয়েছে, তারা কার্যত ধুঁকছে। বন্ধও হয়ে গিয়েছে কয়েকটি। হিন্দুত্ববাদীদের হুঁশিয়ারির চাপে দোকানের নামও বদল করেছেন কেউ কেউ। তাঁরা বুঝছেন ভোটে মেরুকরণের হাওয়া কতটা প্রবল।
যেমন ৩০ বছরের আভেদ খান। মথুরায় তাঁর একটি খাবারের দোকান রয়েছে। সেই দোকানের নাম তিনি রেখেছিলেন ‘শ্রীনাথ’ ধোসা। কেন তিনি হিন্দু নাম ব্যবহার করেছেন—তা নিয়ে ক্রমাগত হুঁশিয়ারির মুখ পড়তে হয় আভেদকে। শেষ পর্যন্ত তিনি দোকানের নাম বদল করতে বাধ্য হন। এখন তাঁর দোকানের নাম ‘আমেরিকান ধোসা সেন্টার’। স্থানীয় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতা রাজেশ ত্রিপাঠী বলেন, ‘ও যদি মুসলিম হয়, তাহলে ওর আসল নাম দোকানের ব্যানারে লেখা উচিত। হিন্দু নাম নিয়ে মানুষকে প্রতারণা করা উচিত নয়।’ একটি রেস্তরাঁর মালিক সাজিদ আনোয়ার বলেন, ‘মুসলিমদের মধ্যে নিরামিষ খাবারের খুব বেশি চাহিদা নেই। সরকারি ফতোয়ায় বিক্রি তলানিতে। ভোট শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি। যোগী ফের ক্ষমতায় এলে রেস্তরাঁ বন্ধ করে অন্য ব্যবসা করতে হবে।’
মথুরার এই অঞ্চলে পাশাপাশি বেশ কয়েকটি মসজিদ-মন্দির রয়েছে। সংলগ্ন রাস্তায় রয়েছে মুসলিম ব্যবসায়ীদের দোকান। গত বছর মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ করার সময় থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন তাঁরা। এর মধ্যেই ভোটের দামামা বেজেছে। বাড়ছে উত্তেজনা। কৃষ্ণ মন্দির ও জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে চাপানউতোর চলছে। জায়গার মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। ভোট প্রচারে এসে যোগী হিন্দুদের পক্ষে সওয়াল করেছেন। জানিয়েছেন, ওই জমি পাবে হিন্দুরা। বিজেপির ভোট প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এই ইস্যু। জমি বিতর্ক নিয়ে জনসভা, সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে উত্তেজক প্রচার। প্রমাদ গুনছেন শহরের মুসলিম অধিবাসীরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে বেশ কয়েকটি বই রয়েছে নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘পুরনো একটি নিষ্পত্তি হওয়া বিষয়কে খুঁচিয়ে তোলা হচ্ছে।’ এমনকী স্বয়ং যোগী আদিত্যনাথ ভোট প্রচারে গিয়ে ৮০-২০ শতাংশ ভাগের কথা বলছেন। কোনও সম্প্রদায়ের নাম উল্লেখ না করলেও তা যে হিন্দু ও মুসলিম জনসংখ্যার আনুপাতিক ভাগ, তা স্পষ্ট।