অনলাইন বনাম অফলাইন – অনলাইন ডাক্তারি অ্যাপগুলির বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত চিকিৎসক সংগঠন
অনলাইন বনাম অফলাইন! ই কর্মাস সংস্থাগুলির সঙ্গে এই বাজার দখলের যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ছোট-মাঝারি-বড় হকার ও দোকানদারদের। তা এখনও পুরোদমে চলছে। ওষুধের দোকানদারদের সঙ্গে এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল অনলাইন ফার্মাসিগুলির। তাও এখন জোরকদমে চলছে। এইবার দেশের বিভিন্ন প্রাইভেট অনলাইন চিকিৎসা পরিষেবার অ্যাপ সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে কার্যত ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ করল সর্বভারতীয় চিকিৎসক সংগঠনগুলি। মূলত সার্জেনদের বিভিন্ন সর্বভারতীয় সংগঠন তীব্র ক্ষোভে এইসব অনলাইন সংস্থার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে নালিশ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। ইউরো, চোখ, জেনারেল সার্জেন সহ নানা ধরনের সার্জেনদের সর্বভারতীয় সংগঠন শামিল হয়েছে এই প্রতিবাদে। চিকিৎসক সংগঠনগুলি জরুরিভিত্তিতে নিজেদের কর্মসমিতির বৈঠক ডেকে সংগঠনভুক্ত ডাক্তারদের স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, এইসব অনলাইন ডাক্তারি অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত হলে সদস্য ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হবে। আইনগত বা অন্য বিপদআপদেও তাঁরা সংগঠনকে পাশে পাবেন না।
প্রসঙ্গত, যত দিন যাচ্ছে, অনেকেই অ্যাপনির্ভর চিকিৎসক পরিষেবার উপর নির্ভরশীল হচ্ছেন। এই ধরনের প্রাইভেট সংস্থাও বাড়ছে। কোনওটার ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, দেশের ৭০০ হাসপাতাল ও ১০০ ক্লিনিকের সঙ্গে তারা যুক্ত। কোনওটা বলছে, ২০০ জন অভিজ্ঞ সার্জেন তাদের হাতে আছে।
১১ হাজারেরও বেশি সার্জেনের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মিনিমাল অ্যাকসেস সার্জেনস অব ইন্ডিয়ার (এএমএএসআই) কর্তারা এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন অবিলম্বে ভারতে এইসব অ্যাপ বন্ধ করতে। এইসব অ্যাপের মাধ্যমে ‘দালালিকে’ প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা। জানিয়েছেন, অ্যাপগুলি রোগী জোগাড় করে দেওয়ার বদলে ডাক্তারদের কমিশন অফার করছে। অ্যাপ ব্যবহার করার জন্য রোগীদের কাছ থেকেও কমিশন নিচ্ছে। তাছাড়া অ্যাপগুলিতে অনলাইন পরামর্শের উপর নির্ভর করে সার্জারি কতটা নির্ভরযোগ্য, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
বলা হয়েছে, অ্যাপের মাধ্যমে সার্জারি বুকিং এবং অ্যাপ, চিকিৎসক ও হাসপাতালের চক্র ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল রেগুলেশন ২০০২-এর পরিপন্থী। যেসব হাসপাতাল এই ধরনের অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, তাদের লাইসেন্স বাতিলেরও দাবি তুলেছে তারা। পাশাপাশি ২৮ জানুয়ারি সংগঠনের কর্মসমিতি জরুরি বৈঠক ডেকে সংগঠন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেসব চিকিৎসক এইসব সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সংগঠনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও পাল্টা বক্তব্য হল, চিকিৎসা ও সার্জারিতে অ্যাপগুলি আসায় সুস্থ প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়েছিল। অপারেশনের খরচ কমছিল। চিকিৎসক খাতে মানুষ ছাড় পাচ্ছিলেন, সাশ্রয় বাড়ার মতো যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছিল, চিকিৎসক সংগঠনগুলি তা চায় না। বহু ডাক্তার ইচ্ছামতো চড়া ফিজ নেন, সেই মৌরুসিপাট্টা ভাঙার চেষ্টা হতেই রাগ বেড়েছে।
চিকিৎসক সংগঠনগুলির বক্তব্য— ১) এই ধরনের অনলাইন পরামর্শের উপর সার্জারি একেবারেই বেআইনি ২) কমিশন প্রথা ও দালালিকে প্রশয় দেয় ৩) রোগী-ডাক্তারের মধ্যে সম্পর্কই তৈরি হয় না। ৪) অপারেশনের পর ফলো আপ গুরুত্ব পায় না। ৫) চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠলে তখন কী হবে? ৬) সর্বভারতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনএমসি’র বিরোধী।
এএমএএসআই ছাড়াও দি অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জেনস অব ইন্ডিয়া, বেঙ্গালুরু অপথালমিক সোসাইটি, ইউরোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব উত্তরপ্রদেশ সহ জেনারেল ও বিভিন্ন ধরনের সার্জেনদের সংগঠন এই ইস্যুতে এককাট্টা হয়েছে। কমবেশি প্রত্যেকেই জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে কর্মসমিতির বৈঠক ডেকে প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।