জেলা কমিটি ঘোষণা ও ১০৮টি পুরসভার ভোট পিছিয়ে দেওয়া নিয়ে বিজেপিকে বিঁধলেন জয়প্রকাশ
ফের রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেললেন সাময়িক ভাবে বহিষ্কৃত জয়প্রকাশ মজুমদার। একদিকে দলের সাংগঠনিক জেলা কমিটি ঘোষণা, অন্যদিকে রাজ্যের ১০৮টি পুরসভার ভোট পিছিয়ে দেওয়া নিয়ে গেরুয়া শিবিরের আর্জি- এই দুই ইস্যুতেই সোমবার জয়প্রকাশ বিঁধলেন বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বকে। ঘটনার ৪৩ বছর পর দলের মরিচঝাঁপি অভিযানের প্রাসঙ্গিকতা নিয়েও প্রশ্নও তুলেছেন বিক্ষুব্ধ এই বিজেপি নেতা।
করোনা সংক্রমণের যুক্তি দিয়ে এদিন ১০৮ পুরসভার ভোট ২৭ ফেব্রুয়ারির বদলে ২৭ মার্চ করার আর্জি জানিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছেন দুই বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়া এবং প্রণয় রায়। একই সঙ্গে বিধাননগর, শিলিগুড়ি-সহ চার পুরনিগমের ভোটের ফল ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ না-করে ১০৮টি পুরসভার ফলাফলের সঙ্গেই প্রকাশ করার সওয়াল করেছেন তাঁরা।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ”রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট বলছে, এখনও করোনা সংক্রমণের হার অনেক বেশি রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভোটার, ভোটকর্মী এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সবার স্বার্থে ১০৮ পুরসভার ভোট চার সপ্তাহ পিছিয়ে দিয়ে আগামী ২৭ মার্চ করা হোক।” যদিও কমিশন সূত্রে এদিন সন্ধে পর্যন্ত ভোট পিছোনোর বিষয়টি বিবেচনার ইঙ্গিত মেলেনি।
এর পরেই বিক্ষুব্ধ নেতা জয়প্রকাশ প্রশ্ন তুলেছেন, গেরুয়া শিবির কি এই পুরভোটকে নিয়মরক্ষার ভোট বলে মনে করছে? বিধাননগরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তিনি বলেন, ”নেতৃত্ব বলছেন, পুরনির্বাচন রয়েছে বলে বিজেপির একাধিক সাংগঠনিক জেলার কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে না। আবার ভোট পিছিয়ে দেওয়ার জন্য চিঠিও দেওয়া হচ্ছে। এই দুই পদক্ষেপ তো পরস্পরবিরোধী। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব কি তা হলে এই নির্বাচনকে নিয়মরক্ষার বলে মনে করছেন?” পুরভোটে বিজেপির প্রস্তুতি নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন জয়প্রকাশ। তাঁর যুক্তি, ”পুরভোটের কারণে অনেক জেলা কমিটি গঠন করা হচ্ছে না। যদি কমিটি না-থাকে, তা হলে কারা নির্বাচন পরিচালনা করবেন? বাইরে থেকে কি লোক নিয়ে আসা হবে? অন্য জেলা থেকে লোক আসবে? সম্পূর্ণ এলোমেলো ভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে।”
বিজেপির রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য সরাসরি এই সব অভিযোগের উত্তর দিতে চাননি। তিনি শুধু বলেছেন, ”উনি দলের একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন। ওঁর এই বক্তব্যের কোনও উত্তর দিতে চাই না। তবে বিজেপি ভোটে লড়াই করার জন্য সব সময়ে প্রস্তুত রয়েছে।”
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে জয়প্রকাশ, রীতেশ তেওয়ারি, সুব্রত ঠাকুর-সহ যে বিক্ষুব্ধ নেতারা একজোট হয়েছেন, তাঁদের অভিযোগ, BJP-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী হাতেগোনা পছন্দের কয়েকজনকে লোককে পুরভোটের দায়িত্ব দিয়েছেন। সাধারণ কর্মীদের এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করাই হয়নি। এদিন দিল্লিতে অমিত শাহের সঙ্গে বঙ্গ বিজেপির অসন্তোষ নিয়ে শান্তনুর আলোচনা হতে পারে বলে বিক্ষুব্ধ শিবির থেকে দাবি করা হলেও, শেষ পর্যন্ত বৈঠকের কোনও খবর নেই।
এদিন বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পলের নেতৃত্বে বিজেপি এসসি- এসটি মোর্চা মরিচঝাঁপি অভিযান করে। সেই দলে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। যদিও জয়প্রকাশের প্রশ্ন, চার দশক পরে হঠাৎ বিজেপি কেন মরিচঝাঁপি অভিযান করতে গেল! তিনি বলেন, ”৪৩ বছর আগের ঘটনার এখন কী প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে জানি না। তা হলে কি রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বিজেপির কোনও ইস্যু নেই? বিজেপি কি তৃণমূলের বি-টিম?’ যদিও শমীকের বক্তব্য, ‘প্রতি বছর এই কর্মসূচি হয়। অতীতে বিজেপি বিরোধী দল ছিল না। তাই সেই কর্মসূচি বহুল প্রচারিত হয়নি।”