রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি পাওয়ার আশা নেই, ইঙ্গিত অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের
রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি পাওয়া প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে। ২০২০ সালের মে মাস থেকেই নামমাত্র টাকা ভর্তুকি বাবদ পাওয়া যায়। এই মুহূর্তে কলকাতায় লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি)-র সাড়ে ১৪ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৯২৯ টাকা। অনেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মাসে মাসে ভর্তুকির টাকাও ঢোকে। তার পরিমাণ ১৯ টাকার আশপাশে। সেটাও আর মিলবে কি না সংশয় তৈরি হয়েছে সংসদে সদ্য পেশ হওয়া বাজেট প্রস্তাবের পর।
বাজেট প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি বাবদ চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। আগের অর্থবর্ষে এই খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সেই হিসেবে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বেড়েছে। কিন্তু গত এক বছরে দেশে যে পরিমাণে রান্নার গ্যাসের গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে, তাতে এই বৃদ্ধি অনেকটাই কম। অন্য দিকে, গত ২০২০ সালের মে মাস থেকে ভর্তুকি দেওয়া কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। ভর্তুকি হিসাবে এখন যে টাকা গ্রাহক পান, তার পরিমাণও সবার জন্য এক নয়। এলপিজি সিলিন্ডার পরিবহণ খরচ সামাল দিতেই মূলত ভর্তুকির টাকা খরচ হয়। অর্থাৎ, এলপিজি ডিপো থেকে গ্রাহকদের দূরত্ব অনুযায়ী তাই ভর্তুকির টাকা কত হবে তা নির্ভর করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যে ভাবে পরিবহণ খরচ বেড়েছে তা সামাল দিতে নির্মলা ভর্তুকি খাতে গত অর্থবর্ষের তুলনায় ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়েছেন। গ্রাহকদের অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার জন্য নয়। ফারাক কতটা তা স্পষ্ট হয় আরও এক বছর আগের হিসেব দেখলে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ভর্তুকি বাবদ কেন্দ্র খরচ করেছিল ২৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা।
উত্তর-পূর্ব ভারতে রান্নার গ্যাসের পরিবহণ খরচ দেশের অন্যান্য প্রান্তের তুলনায় বেশি। তাই সেখানে এলপিজি ডিলাররা সিলিন্ডার পিছু বেশি দাম নেন। সেই কারণে বাজেট প্রস্তাবে উত্তর-পূর্বের জন্য ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ বেড়েছে। আগের অর্থবর্ষে ছিল ৩৯১ কোটি টাকা। এ বারের বরাদ্দ ৮১১ কোটি টাকা। এর ফলে উত্তর-পূর্বের রান্নার গ্যাস গ্রাহকরা তুলনায় বেশি টাকা ভর্তুকি পেতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা প্রকল্পে যাঁরা রান্নার গ্যাসের সংযোগ নেন তাঁদের জন্যও বাজেট বরাদ্দ কমেছে। আগের অর্থবর্ষে ছিল এক হাজার ৬১৮ কোটি টাকা। এ বার প্রায় অর্ধেক কমে হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা। তবে এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি যুক্তিও রয়েছে। বলা হয়েছে, দেশের ৯৯ শতাংশ বাড়িতেই ইতিমধ্যে রান্নার গ্যাসের সংযোগ চলে গিয়েছে।
প্রসঙ্গত ২০১৩ সালে দেশে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি আলাদা করে গ্রাহকদের দেওয়া শুরু হয়। তবে তখন বাছাই এলাকায় এই সুবিধা মিলত। এর আগে ভর্তুকি দেওয়ার পরে বিক্রি হত সিলিন্ডার। নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সরাসরি ভর্তুকি দেওয়ার ব্যবস্থা গোটা দেশে চালু হয়। ঠিক হয়, পরিবার পিছু বছরে ১২টি সিলিন্ডারে মিলবে ভর্তুকির টাকা। একটা সময়ে গ্রাহকরা মাসে ২৫০ টাকার বেশি পেতেন ভর্তুকি বাবদ। যা এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে।