ধনখড় থেকে পেগাসাস, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ঝাঁঝালো আক্রমণ সৌগত-সুখেন্দুর
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ থেকে শুরু করে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীকে প্রবীণ বয়সে পদ্মশ্রী দিয়ে ‘অপমান’ করার অভিযোগ। সংসদের দুই কক্ষে গতকাল রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে আলোচনার মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করল তৃণমূল কংগ্রেস। লোকসভায় সৌগত রায় এবং রাজ্যসভায় সুখেন্দুশেখর রায় এ দিন মোদী সরকারকে বিঁধেছেন তাঁদের নিজস্ব শৈলীতে।
সৌগতবাবু এতটাই ঝাঁঝালো হয়ে পড়েছিলেন যে, যে বার কয়েক তাঁর বক্তব্যের অংশবিশেষ রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়া হয় স্পিকারের নির্দেশে। অন্য দিকে সুখেন্দুশেখর রায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রিপোর্টের তথ্য ও পরিসংখ্যান তুলে ধরে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাভাষণের অভিযোগ আনেন। বক্তৃতার একেবারে শেষে পেগাসাসের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন তিনি। কালো টাকা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন সুখেন্দুশেখর।
সৌগত রায় প্রথম থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক। টাটাকে এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রি করে দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে মোদী সরকারকে ‘বেচু বাবুর সরকার’ আখ্যা দেন তিনি। তার আগে নির্মীয়মাণ নতুন সংসদকে ‘মোদীর তাজমহল’ বলা নিয়ে লোকসভায় প্রবল হইচই শুরু হয়। পরে ওই শব্দবন্ধ রেকর্ড থেকে বাদ যায় স্পিকারের চেয়ারে বসা কিরিট সোলাঙ্কির নির্দেশে। সৌগতবাবুর কথায়, “সংসদভবনে ঢুকতে গেলেই দেখা যাচ্ছে চারদিকে নির্মাণকাজ চলছে। সেন্ট্রাল ভিস্টা তৈরি হচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে। এই টাকা কার বাপের টাকা? এই ভয়ঙ্কর সময়ে যখন মানুষের হাতে টাকা নেই, অতিমারি চলছে, তখন সাধারণ মানুষের টাকা নষ্ট করা হচ্ছে।” হাথরস, উন্নাও, লখিমপুর খেরির হত্যা ও নির্যাতনের উল্লেখ করে বারবার বিজেপিকে ‘সাম্প্রদায়িক’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের সাংসদ আবৃত্তি করেছেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা, “মানুষ বড় কাঁদছে..।” তাঁর সুভাষচন্দ্র বসু সংক্রান্ত বক্তব্যের মধ্যে ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে কিছু বলার চেষ্টা করলে, প্রায় ধমকের স্বরে সৌগতবাবুকে বলতে শোনা যায়, “নিশিকান্ত আপনি পাক্কা আরএসএসের লোক। নেতাজিকে নিয়ে কিছু বলার অধিকার আপনার নেই।”
বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্যপাল নিয়োগ এখন আরএসএস কর্মীদের পুরস্কার দেওয়ারই ভিন্ন পন্থা— সৌগতবাবু এ কথা বলার পর তুমুল হল্লা শুরু হয় কক্ষে। আবার তাঁর এই সংক্রান্ত বক্তব্য রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়া হয়। বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে সৌগতবাবু বলেন, “রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় পদ্ম পুরস্কারের উল্লেখ আছে। কেন্দ্র ৯০ বছরের গায়িকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে পদ্মশ্রী দিয়েছেন। যা তিরিশ বছর বয়স্ক অলিম্পিক্সে সোনাজয়ীকে দিলে মানায়। এই অপমানে এবং আঘাত (শক)-এ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় কোমায় চলে গিয়েছেন।”
রাজ্যসভায় সুখেন্দুশেখর রায় কেন্দ্রীয় সরকারকে বিঁধতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সুষ্ঠু নির্বাচন, মতামতের বহুত্ববাদের উদ্যাপন এবং সত্যের সন্ধানে নিযুক্ত হওয়া— সমাজের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।” এর পরই তিনি কৌশলে বলেন, “আমি সংবাদমাধ্যমকে কখনই সুপারিখোর বলতে পারি না। এই সরকারের উপর আমার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস না থাকলেও তাকে সুপারিখোর সরকার বলতে পারি না! কারণ সেটা এক জন সাংসদ হিসাবে আমার পক্ষে দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কাজ হবে।” এখানে চন্দ্রচূড়ের আর একটি মন্তব্য তিনি উদ্ধৃত করেছেন— “সত্যসন্ধানের জন্য শুধুমাত্র রাষ্ট্রের উপরেই ভরসা করা চলে না। কারণ তা সবসময় মিথ্যামুক্ত নয়।”
এর পরই তিনি এই ‘সত্যসন্ধানের’ প্রসঙ্গে পেগাসাস সংক্রান্ত নিউ ইয়র্ক টাইমের প্রতিবেদনটির কথা তুলেছেন। তাঁর কথায়, “নিজেকে প্রশ্ন করছি, তা হলে কি নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট মিথ্যা? অ্যামনেস্টি মিথ্যা? মিথ্যা বলছে ফ্রান্স-জার্মানির সরকার? আমেরিকার সরকার মিথ্যা বলছে? অ্যাপ্ল, হোয়াটসঅ্যাপ মিথ্যা বলছে? পেগাসাস নিয়ে সত্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে কেবলমাত্র ভারত সরকার!” কত কালো টাকা কেন্দ্র উদ্ধার করতে পেরেছে এবং বিদেশে কত বেআইনি অ্যাকাউন্টধারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই সংক্রান্ত শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন সুখেন্দুশেখরবাবু। তিনি বলেন, “২০১২ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় কালো টাকা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিলেন। এই সরকারের সাহস থাকলে মানুষকে জানাক, কালো টাকার মালিকদের বিরুদ্ধ তারা কী পদক্ষেপ করেছে।”