কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতেই বায়না বাড়ল সরস্বতীর মূর্তির, খুশি কুমোরটুলি

February 4, 2022 | 2 min read

উত্তর কলকাতার রবীন্দ্র সরণির বাসিন্দা গৃহবধূ দেবশ্রী মজুমদার ব্যাগে করে এনেছিলেন একগাদা ইমিটেশনের গয়না। ‘মা’কে ওই গয়না পরিয়ে দিতেই হবে। অনেক ওজর আপত্তির পর তাঁর মরিয়া আবদারে শেষ পর্যন্ত মন গলে বনমালী সরকার স্ট্রিটের মৃৎশিল্পী কমল পালের। প্রতিমার গা থেকে আগে থেকে পরানো গয়না খুলে নেন। পরিয়ে দেন ইমিটেশনগুলি। ‘এত করে বলছিলেন। না করতে মন চাইল না’, বক্তব্য কমলবাবুর। বেজায় খুশি দেবশ্রীদেবীও। ‘কত ঘুরে ঘুরে পচ্ছন্দ করে কিনেছি। ঠাকুরের গায়ে না উঠলে খুব কষ্ট হত’, বলতে বলতে বাড়ির দিকে রওনা দিলেন মহিলা। কেউ আবার বেনারসি শাড়ি এনেছেন। সেটি প্রতিমা শিল্পীকে দিচ্ছেন সরস্বতীর মূর্তিতে পরানোর জন্য। এরকম হাজারো আবদার আর তা হাসিমুখে মিটিয়ে খুশি সরস্বতী পুজোর আগের কুমোরটুলি।

আর এক শিল্পীর ঘরে তখন অবশ্য অন্য ছবি। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে বাকবিতণ্ডা চলছে প্রবল। ইস্যু হচ্ছে হাঁস। সেটির সাইজ কেন এত ছোট, তা নিয়ে ক্ষোভ একটি ক্লাবের সদস্যদের। বায়না করে যাওয়া টাকা ফেরত চান তাঁরা। শিল্পী অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেও বিফল হন। শেষ পর্যন্ত পুরনোটি পাল্টে একটি বড় হাঁস বসিয়ে তবে নিস্তার মেলে। সেভেন ট্যাঙ্কসের বাসিন্দা তপন মুখোপাধ্যায় তাঁর ক্লাস এইটের মেয়েকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। কুমোরটুলি স্ট্রিটের শিল্পী রাজা পালের ঘরে অনেক দরদাম করে ১২০০ টাকায় কিনলেন মেয়ের পচ্ছন্দ করা সরস্বতী। ‘শ’দুয়েক টাকা বেশি নিল বুঝলি’—মেয়েকে বললেন বাবা। শেষ মুহূর্তে কেনাবেচায় দুটো টাকার মুখ দেখায় শিল্পীদের মুখও কেমন যেন চিকমিক করছে। এরকম নানা খণ্ডছবি বৃহস্পতিবার জুড়ে তৈরি হল কলকাতার কুমোরপাড়ায়। স্কুল খোলার সিদ্ধান্তের পর যেন নতুন প্রাণ পেয়েছে কুমোরটুলি। শেষ মুহূর্তের বিকিকিনির ব্যস্ততা তুঙ্গে। একেবারে শেষ মূহূর্তে বেচাকেনার ফিনিস লাইন ছোঁয়ার চেষ্টায় যেন স্প্রিন্ট টানছে কুমোরপাড়া। শনিবারের আগে ঘর ফাঁকা করে ফেলতে আকর্ষণীয় ছাড়ও দিচ্ছেন অনেক শিল্পী।

কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সংস্কৃতি সমিতির যুগ্ম সম্পাদক বাবু পাল জানান, ‘গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে মাত্র সাড়ে ৪০০ মতো সরস্বতী প্রতিমার বায়না হয়েছিল কুমোরটুলিতে। এবার বায়নার সংখ্যা বেড়েছে। স্কুল খুলে যাওয়ায় আকারে বড় প্রতিমা বিক্রি হচ্ছে। শিল্পীরা খানিকটা খুশি। খুব একটা লাভ না হোক, লোকসান যাতে বেশি না হয় সে দিকে তাকিয়ে সবাই।’ সব মিলিয়ে বাগদেবীর আরাধনাকে ঘিরে কুমোরটুলিতে আগের মতো প্রাণচঞ্চলতা ফিরে আসায় খুশি এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনেরা।

প্রতিমার বাজার কিছুটা চড়েছে তার উপর করোনার ডবল ভ্যাকসিন নেওয়া শেষ হয়ে গিয়েছে। এবার শুরু হয়েছে তৃতীয় দফায় প্রবীণ মৃৎশিল্পীদের বুস্টার ডোজ নেওয়ার পালা। ফলে খানিকটা স্বস্তির আমেজও রয়েছে কুমোরটুলিতে। মৃৎশিল্পী সমিতিগুলির বক্তব্য, করোনার টিকাকরণের ক্ষেত্রে সরকারি তরফে যে সহযোগিতা মিলেছে, তাতে তাঁরা খুশি। এই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ায় স্থানীয় বিধায়ক ও এলাকার দুই জনপ্রতিনিধির প্রশংসা করেছে সমিতিগুলি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Kumartuli, #saraswati puja

আরো দেখুন