খুলল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুলে ৮০% হাজিরা, ম্লান কলেজ
যেন মহাপ্রতীক্ষার ও-পার থেকে মধু বর্ষণ করল চিরপরিচিত ঘণ্টাধ্বনি। কলকলিয়ে উঠল স্কুল-প্রাঙ্গণ। বর্ষে বর্ষে দলে দলে যারা বিদ্যামঠতলে আসে, প্রায় দু’বছর পরে এই হর্ষধ্বনি তাদেরই। গুরুবারের ঘড়িতে তখন সকাল ১০টা ৪৫।
বৃহস্পতিবার কলকাতা-সহ রাজ্যের স্কুলে স্কুলে এই দৃশ্য দেখা গেলেও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবিটা খানিক আলাদা। সেখানে হাজিরা তুলনায় অনেক কম। শুধু স্কুল নয়, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতেও এত দিন আন্দোলন হয়েছে অনেক। তার পরে সর্বস্তরের শিক্ষাঙ্গন খোলার সবুজ সঙ্কেত সত্ত্বেও এত কম হাজিরা কেন, প্রশ্ন উঠছে স্বভাবতই। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা চলছে, কোথাও কোথাও পরীক্ষা সামনেই। সেই জন্যও ক্যাম্পাসে ভিড় কিছুটা কম বলে জানাচ্ছেন শিক্ষকেরা।
সরকারি স্কুলে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ারা এলেও বেশির ভাগ বেসরকারি স্কুলে এ দিন ওই শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়নি। শহরে সরকার ও সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে গড়ে ৭৫ থেকে ৮০% পড়ুয়া এসেছে বলে জানায় শিক্ষা দপ্তর। স্কুলশিক্ষকদের উপস্থিতির হার প্রায় ৮৯%। অন্য দিকে, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের হাজিরা ৩০% ছিল বলে উচ্চশিক্ষা দপ্তরের খবর। সেখানে শিক্ষকদের উপস্থিতির হার ৮০%।
করোনার প্রকোপে ২০২০-র ১৬ মার্চ স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গত দু’বছরে দু’বার আংশিক ভাবে স্কুল খুললেও ফের তা বন্ধ করতে হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের টিকাকরণ হয়নি। তাদের নিয়েই চিন্তা বেশি অভিভাবকদের। সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানিয়েছেন, যে-সব ছাত্রছাত্রী এ দিন আসেনি, তাদের অনেকেই জানিয়েছে, সরস্বতী পুজোর পরে স্কুলে আসবে।
উল্টো ছবিও আছে। হিন্দু স্কুলের শিক্ষকেরা ভেবেছিলেন টিকাকরণ হয়নি বলে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ারা কম আসবে। কিন্তু ওই শ্রেণির পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার এতটাই বেশি ছিল যে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করানোর জন্য একাধিক সেকশনের ব্যবস্থা করতে হয়। শিয়ালদহ টাকি বয়েজ়ের প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা বসাক জানান, অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ারা করোনার আগে স্কুলে এসে কিছু দিন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েছে। তার পরে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে ওরা পঞ্চম শ্রেণিতে মর্নিং সেকশনে ছিল। তাই এ দিন ওদের কাছে ডে সেকশনের স্কুলটা নতুন। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের কমবেশি ৯০% পড়ুয়া এসেছে বলে জানান সহকারী প্রধান শিক্ষক রাজেন্দ্রনাথ মণ্ডল।
অনেকেরই স্কুলপোশাক ছোট হয়ে গিয়েছে বলে জানান বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারী। বেসরকারি স্কুলে হাজিরার ছবিটা কিছু ম্লান। সাউথ পয়েন্ট স্কুলে এসেছিল শুধু নবম ও একাদশের পড়ুয়ারা। শ্রীশিক্ষায়তনে শুধু দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা এসেছে। ডিপিএস রুবি পার্ক জানায়, তাদের স্কুলে অষ্টম থেকে দ্বাদশের ৫০% পড়ুয়া এসেছিল। রামমোহন মিশন হাইস্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস জানান, এ দিন এসেছিল তাঁদের অষ্টম ও দ্বাদশের ছাত্রছাত্রীরা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য স্যমন্তক দাস জানান, কলা এবং বিজ্ঞান ফ্যাকাল্টিতে অফলাইনে ক্লাস হয়নি। ৭ ফেব্রুয়ারি হস্টেল খুলছে। দূরের ছাত্রছাত্রীরা অনুরোধ করেছেন, তার পরে ক্লাস চালু করা হোক। তবে ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির কিছু ক্লাস এ দিন হয়েছে। যদিও ক্যাম্পাস ছিল খুবই ফাঁকা।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরের প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষা সামনেই। তৃতীয় সিমেস্টারের পরীক্ষা সবে শেষ হয়েছে। সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) আশিস চট্টোপাধ্যায় জানান, সামনের সপ্তাহে চতুর্থ সিমেস্টারের নিয়মিত ক্লাস শুরু হবে। এ দিন তাই কোনও বিভাগে তেমন কোনও অফলাইন ক্লাস হয়নি।
বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা অভিরূপ চক্রবর্তী জানান, তাঁরা এ দিন ক্যাম্পাসে গিয়ে সরস্বতী পূজোর প্রস্তুতি চালিয়েছেন। তাঁদের পুজোর থিম ‘খেলা হবে’। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ দিন কোনও ক্লাস হয়নি। ক্যাম্পাস সরগরম ছিল এসএফআই এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মধ্যে চাপান-উতোরে। দু’পক্ষেরই অভিযোগ, এক দলের পোস্টারের উপরে অন্য পক্ষ পোস্টার সেঁটে দিয়েছে। হস্টেল খোলার দাবিতে এ দিনেও মুখর হয় এসএফআই।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী জানান, এ দিন তাঁদের স্নাতক স্তরে ষষ্ঠ সিমেস্টার এবং স্নাতকোত্তরে চতুর্থ সিমেস্টারের ক্লাস হয়েছে। তবে হাজিরা ছিল খুবই কম। তাঁর বক্তব্য, পড়ুয়ারা হয়তো সরস্বতী পুজোর পরেই ক্যাম্পাসে আসতে চাইছেন।
কলেজগুলিতে এ দিন মূলত প্রথম সিমেস্টারের ক্লাস হয়েছে। সেই সঙ্গে পড়ুয়ারা অনেক ক্ষেত্রে সরস্বতী পুজোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন।