লক্ষ্য উন্নততর নাগরিক পরিষেবা, অদলবদল হতে পারে কলকাতার বেশ কিছু বরো
নাগরিক পরিষেবাকে কার্যত ‘পাড়াস্তরে’ পৌঁছে দেওয়ায় ব্রতী হয়েছে কলকাতা পুরসভার নয়া বোর্ড। পুরনির্বাচনের ইস্তাহারে মহানগরীর উন্নয়নে যে ‘১০ দিগন্ত’এর বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল জোড়াফুল শিবির, কাজ শুরু হয়েছে তা রূপায়নে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দিতে। সেই লক্ষ্যে মেয়র ফিরহাদ হাকিম ‘টিম’ সমেত নেমে পড়েছেন ময়দানে। ‘দুয়ার প্রান্তে’র পরিষেবাকে সুসংহত করতে তাই এবার বরো কমিটি ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করছে পুর কর্তৃপক্ষ। কলকাতা শহরে একেকটি বরোতে ওয়ার্ড সংখ্যা একেকরকম। কোথাও বেশি, কোথাও কম। কোনও বরোয় ওয়ার্ড সংখ্যা ১০, তো কোথাও ১৬। আবার কোথাও মাত্র সাতটি ওয়ার্ড। নাগরিক পরিষেবা সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে, ১৬টি বরোর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটিতে ওয়ার্ড সংখ্যা যথাযথ। আরও উন্নত পরিষেবার লক্ষ্যে ওয়ার্ড সংখ্যায় একটা ‘সামঞ্জস্য’ এনে, বরো কমিটিগুলি গঠন করার ‘চিন্তাভাবনা’ শুরু হয়েছে এসএন ব্যানার্জি রোডের ছোট লালবাড়িতে। সামঞ্জস্যহীন ওয়ার্ড সংখ্যার ভিত্তিতে কেন হবে বরো কমিটি গঠন, এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে পুরভবনে। নতুন পুর বোর্ড ক্ষমতায় আসার পর এই চর্চা আরও গতি পেয়েছে। এ নিয়ে নগরোন্নয়ন দপ্তরের সঙ্গে আলোচনায় বসবে পুরসভা।
শহরে ১০টি এমন বরো রয়েছে, যেগুলির আওতায় সাত থেকে ন’টি করে ওয়ার্ড রয়েছে। বাকি ছ’টি বরোর অধীনে রয়েছে ১০ থেকে ১২টি করে ওয়ার্ড। সব থেকে বেশি ওয়ার্ড রয়েছে ১০ নম্বর বরোয়। সেখানে ওয়ার্ডের সংখ্যা ১২টি। আবার ৪, ৬ এবং ৯ নম্বর বরোর অধীনে রয়েছে ১০টি করে ওয়ার্ড। মাঝে ১১টি ওয়ার্ড নিয়ে গড়ে উঠেছে ৮ নম্বর বরো। এক বরো চেয়ারম্যানের কথায়, সব বরোর মধ্যে সামঞ্জস্য নেই। একটা সময় বরো ইন্টিগ্রেটেড ফান্ড বা বরো সুসংহত তহবিল বরাদ্দ করা হতো। প্রতিটি বরোকে দেওয়া হতো নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা। গোল বাঁধত তা নিয়েই। যে বরোতে ওয়ার্ড সংখ্যা বেশি, তারা পড়ত অসুবিধায়। টান পড়ত ওয়ার্ড পিছু ভাগের টাকায়। বরং তুলনায় ছোট বরোর পোয়াবারো। এই সমস্যা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করলে একটা সময় এই পদ্ধতি তুলে দেওয়া হয়। পরিবর্তে চালু হয় ওয়ার্ড প্রতি বরাদ্দের ব্যবস্থা। তবে সেই টাকা ওয়ার্ডগুলি সরাসরি হাতে পায় না। টাকা আসে বরো ঘুরেই। এসব ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য আনতেই বরো এলাকার পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজনীয়তাকে ঘিরে আলোচনা।
সূত্রের খবর, এলাকা পুনর্বিন্যাস করা হলে, একটি নির্দিষ্ট বরোর উপর থেকে অতিরিক্ত ওয়ার্ডের চাপ কমবে। আয়তনে বড় বরোগুলি থেকে দু’-একটি ওয়ার্ডকে কেটে পাশের বরোর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যেতে পারে। এভাবেই ওয়ার্ডগুলিকে নতুন করে ১৬টি বরোর মধ্যে ভাগ করতে পারলে একটা সামঞ্জস্য আসবে। মেয়র ফিরহাদ হাকিমও এই যুক্তির সঙ্গে একমত। এক পুরকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের আওতাভুক্ত। বহু বছর ধরেই এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। কিন্তু তা কাগজে-কলমে রূপ পায়নি। এখন নতুন বোর্ড ক্ষমতায় আসার পর ফের আলোচনা শুরু হয়েছে। পুরসভা মনে করলে তারা পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরকে এব্যাপারে প্রস্তাব পাঠাতে পারে।