সক্রিয় পশ্চিমী ঝঞ্ঝা, দার্জিলিংয়ে বাড়ছে তুষারপাত
সাধারণত এত বেশি তুষারপাত দার্জিলিংয়ে হয় না। তুষারপাত হলেও তা বেশি হয় সান্দাকফু, ফালুট প্রভৃতি বেশি উচ্চতার স্থানগুলিতে। কিন্তু এবার কিছুটা ব্যতিক্রমী ঘটনা দেখা যাচ্ছে। দার্জিলিং শহর ও সংলগ্ন এলাকায় দফায় দফায় ও টানা কয়েকদিন ধরেও তুষারপাত হয়েছে। শুধু তাই নয়, তুলনামূলকভাবে উচ্চতা কম হলেও এই দফায় কালিম্পং ও কার্শিয়াংয়ে কিছু জায়গায় বরফ পড়েছে। দার্জিলিং পাহাড়ে তুষারপাতের মাত্রা বেশি হওয়ার কারণ কি? আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, এর পিছনে ‘লা নিনা’-র প্রভাব থাকতে পারে। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশ দাস জানিয়েছেন, লা নিনা সক্রিয় থাকলে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার সক্রিয়তা বেশি হয়। লা নিনা সক্রিয় থাকার কারণে এবার দার্জিলিংয়ে তুষারপাত বেশি হচ্ছে।
প্রশান্ত মহাসাগরে জলের উষ্ণতার কারণে লা নিনা ও এল নিনো পরিস্থিতি তৈরি হয়। জলের উষ্ণতা বেশি থাকলে এল নিনো এবং কম থাকলে লা নিনা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। লা নিনা সক্রিয় থাকলে বৃষ্টিপাত বেশি হয় ভারতে। আবার এল নিনো পরিস্থিতিতে বৃষ্টি কমে। এবার বর্ষায় লা নিনা পরিস্থিতি থাকায় দেশে বৃষ্টি বেশি হয়েছে। এই পরিস্থিতির জন্য এবার দেশে শীতকাল দীর্ঘ হতে পারে, এমন পূর্বাভাস কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের।
দেশে তুষারপাত হয়ে থাকে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জন্য। এটি একটি নিম্নচাপ, যার উৎপত্তি ভূমধ্যসাগরে। ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে এই ঝঞ্ঝা প্রবেশ করে পশ্চিম হিমালয়ের কাশ্মীর এলাকায়। যেহেতু এটি পশ্চিম হিমালয় এলাকায় অবস্থান করে, তাই এর প্রভাব কাশ্মীর ছাড়াও হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ডেও বেশি পড়ে। ঝঞ্ঝা খুব সক্রিয় হলে তবেই তার প্রভাব পূর্ব হিমালয়ের সিকিম ও দার্জিলিংয়ে পড়ে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের একটি বিশেষ রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘকালীন সময়ের নিরিখে যেখানে দার্জিলিং-সিকিমে গড়ে বছরে ৩-৫ দিন তুষারপাত হয়, সেখানে কাশ্মীর ও হিমাচল প্রদেশের অনেক এলাকায় বছরে একশো বা তার বেশি দিন তুষারপাত হয়। উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় বছরে ৫০ বা তার বেশি দিন তুষারপাত হয়। আবহাওয়া অধিকর্তা জানিয়েছেন, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা পশ্চিম হিমালয়ের উত্তর অংশ দিয়ে চলে গেলে কাশ্মীর ও হিমাচল প্রদেশে তুষারপাত হয়। হিমালয়ের দক্ষিণ অংশে ঝঞ্ঝা এলে উত্তরাখণ্ডের সঙ্গে দার্জিলিং ও সিকিমে তুষারপাত হয়। এবার ঝঞ্ঝার হিমালয়ের দক্ষিণ অংশে আসার প্রবণতা বেশি।কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল মিহির গুহ জানিয়েছেন, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সক্রিয় থাকলে তা উত্তর ভারতের সমতল এলাকা পর্যন্ত চলে আসে। রাজস্থান, হরিয়ানার উপর ঘূর্ণাবর্ত হিসেবে অবস্থান করে ঝঞ্ঝা। এই সময় ঝঞ্ঝা থেকে বিস্তৃত নিম্নচাপ অক্ষরেখা পূর্ব ভারত পর্যন্ত চলে আসে। তার প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গ সহ পূর্ব ভারতে বৃষ্টির পাশাপাশি দার্জিলিং ও সিকিমে তুষারপাত হয়। এবার ডিসেম্বর থেকে অনেকগুলি সক্রিয় পশ্চিমী ঝঞ্ঝা উত্তর ভারতের সমতল এলাকার উপর চলে এসেছিল। এই কারণে পশ্চিমবঙ্গের সমতল এলাকায় অসময়ের বৃষ্টি ও দার্জিলিংয়ের পাহাড়ে তুষারপাত বেশি হয়েছে।