প্রথা ভেঙে বাণী বন্দনা, পুরোহিতের ভূমিকায় অশোকনগরের দশম শ্রেণির ছাত্রী
![](https://drishtibhongi.in/wp-content/uploads/2022/02/saraswati-puja.jpg)
ছকের বাইরে বেরিয়ে হয়ত ভাবতে পারেন অনেকে। কিন্তু সেই ভাবনা বাস্তবায়িত করতে পারেন ক’জন? এই প্রশ্ন, সংশয়ের ফাঁক গলেই এবারের সরস্বতী পুজোয় (Saraswati Puja) দৃষ্টান্ত স্থাপন করল রাজ্যের দুই প্রান্তের দুই কন্যা। উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের (Ashoknagar) দশম শ্রেণির ছাত্রী পুরোহিতের আসনে বসে সারলেন বাণীবন্দনা। বীরভূমের ইলামবাজারে আবার এক আদিবাসী কন্যার হাতে পূজিতা হলেন বিদ্যার দেবী। দু’জনেরই উৎসাহদাতা দুই শিক্ষক-শিক্ষিকা। ২০২২ সালের সরস্বতী পুজো এভাবেই স্মরণীয় হয়ে রইল বাংলার বুকে।
অশোকনগর বিদ্যাসাগর বাণীভবন উচ্চবিদ্যালয়। এখানকার দশম শ্রেণির ছাত্রী শর্মিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়। ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে শর্মিষ্ঠা পুজো করার তালিম নিয়েছে। তার বাবা পুরোহিত। তিনিই মেয়েকে শিখিয়েছেন পুজোর খুঁটিনাটি। স্কুলের প্রধান শিক্ষকও শর্মিষ্ঠার এই ইচ্ছেকে উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। এ বছর স্কুলের পুজোটা শর্মিষ্ঠাই করুক, এই ভাবনাকে সিলমোহর দিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। তারপরই নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে অশোকনগর বিদ্যাসাগর বাণীভবন উচ্চবিদ্যালয়ে দেবী সরস্বতী পূজিতা হলেন শর্মিষ্ঠার হাতে। দশম শ্রেণির ছাত্রীর বক্তব্য, ”নারীদের দিয়ে পুজো করানোর কথা সাধারণত আমরা ভাবি না। কিন্তু চিরাচরিত সংস্কার ভেঙে আমাদের প্রধান শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় আমরা ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিলাম। তাতে খুশি স্কুলের সকলেই।”
তবে এই স্কুলে সরস্বতী পুজোর চমক রয়েছে আরও। প্রতিমা তৈরি করেছে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র শুভদীপ শীল। কয়েক মাস ধরে শুভদীপ তিলে তিলে গড়ে তুলেছে সরস্বতী প্রতিমা। সেই প্রতিমায় পুজো করল শর্মিষ্ঠা। শুভদীপ-শর্মিষ্ঠার যৌথ উদ্যোগে অশোকনগর বিদ্যাসাগর বাণীভবন উচ্চবিদ্যালয়ের বীণাপাণির আরাধনা প্রকৃত অর্থে হয়ে উঠল ব্যতিক্রমী। যার প্রশংসায় পঞ্চমুখ সকলে।
ব্যতিক্রমী ছবি রয়েছে আরও। বীরভূমের (Birbhum) ইলামবাজারে আদিবাসী পড়ুয়াদের জন্য ছোট্ট স্কুল গড়ে তুলেছিলেন শিক্ষিকা প্রীতিকণা দেবী। আর সেই প্রতিষ্ঠানেই আজ পূজিতা হলেন দেবী সরস্বতী, এক আদিবাসী ছাত্রীর হাত ধরে। চৈতালি মুর্মু নামে কিশোরী সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণ করে বাগদেবীর আরধনায় মেতে ওঠে। এই প্রথম কোনও আদিবাসী ছাত্রী পুরোহিতের আসনে বসিয়ে প্রথা ভাঙার কাজটা অনেকটাই এগিয়ে দিলেন প্রীতিকণা দেবী।