রাজ্যে নতুন বিমানবন্দর গঠন: জ্যোতিরাদিত্যর অভিযোগ খণ্ডন নবান্নের
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের বিমাতৃসুলভ আচরণ সর্বজনবিদিত। বাংলাকে অপদস্থ করতে বিজেপির শীর্ষ নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা সদা প্রস্তুত। এই তালিকায় নবতম সংযোজন কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাজস্থানের রাজপুত্র জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। রবিবার কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রীর গলায়ও উঠে এল সেই এক সুর। কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আধুনিক বিমানবন্দর গড়তে নবান্নের অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন জ্যোতিরাদিত্য। যদিও রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই দাবিকে কার্যত ভিত্তিহীন বলেই উল্লেখ করেছে। ভবিষ্যতে রাজ্যের বিভিন্ন কোণে বিমান পরিষেবা পৌঁছে দিতে নবান্নই প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ করছে বলে তাঁরা জানাচ্ছেন। সব মিলিয়ে বাংলায় বিমান পরিষেবার উন্নয়নের প্রশ্নে এবার ফের শুরু হল কেন্দ্র-রাজ্য তরজা।
মোদী সরকারের নতুন বাজেটের ‘ফিল গুড’ তথ্য তুলে ধরতেই এদিন কলকাতায় আসেন জ্যোতিরাদিত্য। সেখানেই রাজ্যের বিমানবন্দর প্রসঙ্গটি ওঠে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবি, দিল্লির সরকার চায় রাজ্যের বিমান ক্ষেত্রের উন্নয়ন। কিন্তু একহাতে তো তালি বাজে না। এ বিষয়ে আলোচনা করতে চেয়ে গত ছ’মাস ধরে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চাইলেও, দেখা করতে পারেননি।
জ্যোতিরাদিত্যের অভিযোগ, নতুন বিমানবন্দর গড়তে চাই জমি। এক্ষেত্রে যতক্ষণ রাজ্য সরকার এয়ারপোর্ট অথারিটির হাতে তা তুলে না দেবে, কোনও কাজই হবে না। সেই সূত্রে মমতার সরকারের জমি অধিগ্রহণ নীতির পরোক্ষে সমালোচনা করেন তিনি। জ্যোতিরাদিত্য বলেন, দিল্লি চায় কলকাতায় দ্বিতীয় বিমানবন্দর হোক। বর্তমানে এই বিমানবন্দর সর্বোচ্চ যাত্রী পরিবহণ করছে। ভবিষ্যতে কলকাতার জন্য ২ লক্ষ বর্গ মিটার আয়তনের একটি নতুন বিমানবন্দর তৈরির কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার কথা জানান জ্যোতিরাদিত্য। তাঁর অভিযোগ, অবশ্য এই উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন আগেই নবান্নে চিঠি পাঠানো হলেও কোনও জবাব আসেনি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি রাজ্য সরকারের লাল ফিতের ফাঁসে আটকে রয়েছে। মনে করেন তিনি।
পাশাপাশি বাগডোগরা, হাসিমারা, কলাইকুন্ডা-সহ কয়েকটি বিমানবন্দর নির্মাণ অথবা পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান করতে পারেনি নবান্ন। অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী। যদিও রাজ্যের বক্তব্য, বাগডোগরা বিমানবন্দরের নয়া টার্মিনাল তৈরির জন্য খুব শীঘ্রই ১০৪ একর জমি হস্তান্তর করা হবে। গত ডিসেম্বরে নবান্নের শীর্ষ আধিকারিকদের একটি দল বালুরঘাট, কোচবিহার ও মালদহ বিমানবন্দর পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। মূলত পরিকাঠামোগত উন্নয়নের বিবিধ দিক খতিয়ে দেখতেই ছিল এই সফর। যার মধ্যে মালদহের জন্য ৩৭ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। এই বিমানবন্দরটি মূলত ছোট উড়ানের জন্য। এছাড়া রাজ্যের তরফে বাকি বিমানবন্দরগুলির গঠনেও দ্রুত সহযোগিতা করা হবে। রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের মতে, আন্তঃরাজ্য এবং আন্তর্জাতিক স্তরে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যথেষ্ট আন্তরিক ও সক্রিয়। তাঁরই নির্দেশে যাবতীয় ইতিবাচক পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কলকাতা বিমানবন্দরের বিকল্প হিসেবে জানুয়ারিতেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে জমি চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। স্বভাবতই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এদিনের তোলা অভিযোগের কোনও সারবত্তা খুঁজে পাচ্ছেন না বাংলার প্রশাসনিক কর্তারা। মন্ত্রী হয়েও জ্যোতিরাদিত্য এটা করেছেন মূলত সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।