কুমোরটুলির মৃৎশিল্পকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিল বাংলার শিল্প দপ্তর
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে কুমোরটুলির মৃৎশিল্পের আধুনিকীকরণ চাইছে রাজ্য সরকার। সেই লক্ষ্যে কুমোরটুলির শিল্পীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। তাতে একদিকে যেমন শিল্পীদের কাজের সুবিধা হবে, তেমনই লাভের মুখ দেখবেন তাঁরা। যদিও শিল্পীদের একাংশের আশঙ্কা, যন্ত্রের অনুপ্রবেশে শিল্পীদের স্বকীয়তা নষ্ট হবে। কুমোরটুলির শিল্পীদের হাতে গড়া প্রতিমার নিজস্ব শৈলী চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে।
নবান্ন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই কুমোরটুলির শতাব্দীপ্রাচীন মৃৎশিল্পকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে শিল্প দপ্তর। কলকাতা জেলা শিল্পকেন্দ্রের মাধ্যমে কুমোরটুলির শিল্পীদের হাতে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি তুলে দেওয়া হবে। তার মধ্যে রয়েছে রং করার স্প্রে গান মেশিন, এয়ার কমপ্রেসার, ড্রিল মেশিন এবং মার্বেল কাটার টুলস। পুজোর মরসুম শুরু হওয়ার আগেই এই সব যন্ত্রপাতি পৌঁছে যাবে কুমোরটুলিতে।
যদিও রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন বলেন, ”কুমোরটুলির প্রতিমার একটা নিজস্ব ঘরানা আছে। এখানকার শিল্পীরা মাটির সঙ্গে খড়, তুষ মিশিয়ে প্রতিমা তৈরি করেন। সে জন্যই তার একটা নান্দনিক সৌন্দর্য আছে। আমি জানি না, কেন সেখানে যন্ত্রের প্রয়োজন হচ্ছে। এটা হলে কুমোরটুলি তার নিজস্বতা হারাবে।”
কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পীদের হাত ধরে কলকাতার গঙ্গার পাড়ে কুমোরটুলি মৃৎশিল্প নগরী গড়ে উঠেছে। সেখানকার প্রতিমার খ্যাতি আজ বিশ্বজোড়া। প্রতি বছর কুমোরটুলির প্রতিমা বিদেশে পাড়ি দেয়। তা সত্ত্বেও নানা কারণে ধুঁকছে কুমোরটুলির মৃৎশিল্প। প্রতিমা তৈরির বিভিন্ন উপকরণ যেমন, মাটি, কাঠ, বাঁশ, দড়ি, রং, কাপড় ও শোলার উত্তরোত্তর দাম বৃদ্ধির কারণে মৃৎশিল্পের খরচখরচা অনেকটাই বেড়েছে। তবে কর্মচারীর অভাব আরও বড় চিন্তার কারণ। কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা জানাচ্ছেন, তাদের পরবর্তী প্রজন্ম আর ঠাকুর গড়তে আগ্রহী নয়।
একটা সময় পর্যন্ত জেলা থেকে প্রচুর শ্রমিক কুমোরটুলিতে ঠাকুর গড়তে আসতেন। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে মূলত সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু গত ক’বছর ধরে তাঁদের সংখ্যা কমেছে। বিনামূল্যে রেশন, একশো দিনের কাজের প্রকল্প বা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সৌজন্যে তাঁদের রোজগারের রাস্তা তৈরি হয়েছে। করোনাও একটা বড় কারণ। এই অবস্থায় প্রতিমা নির্মাণে যন্ত্রের সাহায্য নেওয়া ছাড়া অন্য রাস্তা নেই বলে জানাচ্ছেন শিল্পীদের একাংশ।
কুমোরটুলি মৃৎশিল্প ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোপারেটিভ সোসাইটির যুগ্ম সম্পাদক রঞ্জিত সরকার বলেন, ”২০২০ সালের শেষের দিকে শিল্প দপ্তরের প্রতিনিধি দল পরিদর্শনে এসেছিলেন। আমাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা জানতে চেয়েছিলেন। আমরা মৃৎশিল্পীদের সমস্যার কথা জানিয়েছিলাম। তাঁরা কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবেন বলে কথা দিয়েছিলেন।” তাঁর দাবি, ”যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে প্রতিমার মান আরও উন্নত হবে। প্রতিমা রং করতে এখন যা সময় লাগে, তার থেকে যন্ত্রে অনেক কম সময় লাগবে। কাজটা নিখুঁত হবে।” উদাহরণ হিসাবে তিনি জানান, তুলি দিয়ে রং করলে প্রতিমায় একটা দাগ থেকে যায়। কিন্তু স্প্রে গান দিয়ে রং করলে কোনও দাগ থাকবে না।