রাজ্যপাল থেকে কংগ্রেস- বিজেপি আঁতাত, লোকসভায় বিজেপিকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করলেন তৃণমূল সাংসদরা
গতকাল সংসদে সরকারকে একের পর এক আক্রমণে বিদ্ধ করেন তৃণমূল সাংসদরা। কাল জিরো আওয়ারে সরকারকে এক হাত নিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নিয়ে বলতে উঠে সৌগত রায় সরাসরি অন্যান্য রাজ্যের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর কথায়,“কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখানে রয়েছেন। তাঁর রাজ্যপালদের নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার রয়েছে। তিনি কি বলতে পারেন না রাজ্যপালকে টুইট করা বন্ধ করতে? রাজ্যের প্রত্যেক দিনের কাজে নাক না গলাতে? যদি এরকমই চলতে থাকে, তা হলে দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো আর থাকবে না।” সৌগতবাবুর কথায়, “বিধানসভায় পাশ হয়ে যাওয়া বিল রাজ্যপাল ফিরিয়ে দিচ্ছেন রাজ্যের পুলিশ কর্তা, মুখ্যসচিবকে ডেকে পাঠাচ্ছেন।”
একই দিনে লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের আঁতাতের আশঙ্কা প্রকাশ করেন। বাজেট-বিতর্কে অংশ নিয়ে গতকাল দীর্ঘ বক্তৃতার একেবারে শেষলগ্নে সুদীপের অভিযোগ, রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাবের জবাবি বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুধু লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর কথাতেই সাড়া দিয়েছেন। বাকি কারও কোনও প্রন্নের উত্তর দেননি। লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা বক্তব্য প্রথম সারিতে বসে মন দিয়ে শুনেছি এ তো সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রী বনাম অধীর রঞ্জনের যুদ্ধ অথচ লোকসভায় বহু সাংসদ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বক্তব্য রাখতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু কেন প্রধানমন্ত্রী কারও কোনও কথার জবাব দিলেন না। এটা কি দু’জনের কোনও বোঝাপড়া? না কি দুই দলের আঁতাত?
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার লোকসভায় অধীর প্রধানমন্ত্রীকে সামনে বসিয়ে নিশানা করেছিলেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর জবাবের সময়ও অধীর বারবার উঠে দাঁড়িয়ে সরব হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী অধীরকে থামাতে রসিকতা করে বলেছেন, “আপনার পরাক্রম যেখানে নথিবদ্ধ হওয়ার কথা, সেখানে হয়ে গিয়েছে। এই অধিবেশনে কেউ আপনাকে কেংগ্রেসের লোকসভার দলনেতার পদ থেকে) সরাতে পারবে না। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি।“ রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে বিতর্কে রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের তরফে প্রথম বক্তা ছিলেন। কিন্ত এ দিন মোদীর জবাবের সময় তিনি ছিলেন না। অধীরের নেতৃত্বে কংগ্রেসের সাংসদেরাই প্রধানমন্ত্রীর জবাবের সময় নানা প্রশ্ন তুলছিলেন। রাহুলের নাম না করে মোদীর পাল্টা কটাক্ষ, “কিছু লোক বলে চলে যায়। এই বেচারাদের ঝামেলা পোহাতে হয়া”
চলতি বাজেট অধিবেশনে এখনও পর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সংঘাত দেখা যায়নি। যেমন, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে দেখা গিয়েছিল। মাঝখানের সময়ে জল কিছুটা গড়িয়েছে। কংগ্রেসের সঙ্গে কতটা সংঘাত, কতটা সমঝোতা তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে তৈরি হয়েছে দ্বিমত। এমতাবস্থায় পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ সুদীপ এই অভিযোগ তুলে আবার নতুন করে বিরোধী রাজনীতিতে বিভাজনের আশঙ্কা উস্কে দিলেন। সুদীপ তাঁর বক্তৃতায় পেট্রল- ডিজেলের দাম, বেসরকারিকরণ, কালো টাকা উদ্ধারে ব্যর্থতা নিয়ে মোদী সরকারকে নিশানা করেছেন।