উত্তরপ্রদেশে প্রথম দফার নির্বাচনের পর চিন্তায় বিজেপি শিবির
কয়েকটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত অশান্তি ছাড়া মোটের উপর শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে উত্তরপ্রদেশের প্রথম দফার নির্বাচন (Uttar Pradesh Election)। প্রথম দফায় পূর্ব উত্তরপ্রদেশের মোট ৫৮টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) হিসাব মতো ভোট পড়েছে মোট ৬০.১৭ শতাংশ। যা আগেরবারের থেকে বেশ খানিকটা কম।
এই ভোটের হার নিয়েই এখন যাবতীয় অঙ্ক কষাকষি চলছে। ২০১৭ সালে এই ১১ জেলার ৫৮টি আসনে ভোট পড়েছিল প্রায় ৬৩.৫ শতাংশ। অর্থাৎ এবার ভোটের হার কমে গিয়েছে ৩ শতাংশের বেশি। রাজনীতির পাটিগণিতের হিসাব বলে, ভোটের হার কম হওয়াটা শাসক শিবিরের জন্য সুখবর। ধরে নেওয়া হয়, ভোটের হার কম হওয়া মানে শাসকের বিরুদ্ধে মানুষের অসন্তোষ কম, এবং সাধারণ মানুষ সরকার বদলাতে চাইছেন না। সেদিক থেকে দেখতে গেলে প্রথম দফার ভোটের পর নিশ্চিন্তে থাকার কথা বিজেপির (BJP)। কিন্তু গেরুয়া শিবির নিশ্চিন্ত হতে পারছে না। বরং তাঁরা বেশ দুশ্চিন্তাতেই আছে।
বিজেপির দুশ্চিন্তার কারণটা আসলে ভোটের প্যাটার্ন। প্রথম দফায় মূলত ভোট হয়েছে পূর্ব উত্তরপ্রদেশে। এই এলাকায় জাঠ কৃষকরা (Jath Farmers) সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। সেই সঙ্গে রয়েছে মুসলিম ভোট। প্রথম দফায় যে আসনগুলিতে ভোট হয়েছিল, সেগুলিতে মোট মুসলিম ভোটার সংখ্যা প্রায় ২৫ শতাংশ। মুজফফরনগরের মতো জেলায় ৪১ শতাংশ ভোটার মুসলিম। সেই সঙ্গে বহু আসনে রয়েছেন ৪০ শতাংশ জাঠ ভোটার। কিছু ভোট রয়েছে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের। ২০১৭ সালে জাঠেরা বিজেপির পাশে ছিল। সেই সঙ্গে ছিল উচ্চবর্ণের ভোট। আগের নির্বাচনে যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Adityanath) তথা বিজেপি ধর্মের ভিত্তিতে মেরুকরণে সক্ষম হয়েছিল। একজোট হয়ে ভোট দিয়েছিলেন উচ্চবর্ণের হিন্দু এবং জাঠেরা। পালটা জোটবদ্ধভাবে ভোট দিয়েছিলেন মুসলমানরাও। যার ফলে আগেরবার ভোটের হার অনেকটাই বেশি (৬৩.৫ শতাংশ) ছিল। জাঠ এবং উচ্চবর্ণের ভোটারদের মেলবন্ধনের বিরাট সাফল্যও পায় বিজেপি। ৫৮টি আসনের মধ্যে ৫৩টি জিতেছিল তারা। ২টি করে আসন যায় সপা (SP) এবং বসপার দখলে। একটি আসন জেতে আরএলডি।
এবার সমীকরণ অন্য। কৃষক বিক্ষোভের জেরে জাঠেরা বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়েছে। অখিলেশ যাদবের (Akhilesh Yadav) পক্ষে কাজ করছে মুসলিম এবং জাঠ ভোটারদের যুগলবন্দি। প্রথম দফার নির্বাচনের (First Phase Election) গ্রাউন্ড রিপোর্ট বলছে, এবারের ভোটে মেরুকরণ সেভাবে কাজ করেনি। মুসলিম এবং জাঠেরা যৌথভাবে ভোট দিলেও হতাশ উচ্চবর্ণের হিন্দুদের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার প্রবণতা কম ছিল। মুসলিমরা প্রথম দফায় সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রে ভিড় করেছিলেন। ভাল হারে ভোট দিয়েছেন জাঠেরাও। তুলনায় কম ছিলেন উচ্চবর্ণের ভোটাররা। সেটাই বিজেপির চিন্তার কারণ হতে পারে।