আগামী দু’মাসে জিনিসপত্রের দাম শিখর ছোঁবে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দাবিতে চাপে কেন্দ্র
অর্থনীতির মন্দা, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি—কোনও সমস্যাই মোদী সরকার স্বীকার করে না। অর্থমন্ত্রী হোক বা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী, প্রত্যেকের অভিযোগ, সবই বিরোধীদের অপপ্রচার। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, দেশের আর্থিক নীতির পরিচালক রিজার্ভ ব্যাঙ্কই মোদী সরকারের সঙ্গে একমত নয়! বরং মোদী সরকার যতই বলুক মূল্যবৃদ্ধি উদ্বেগজনক নয়, এই দাবির সম্পূর্ণ উল্টো সুর ধরল আরবিআই। শুধু তাই নয়, গভর্নর শক্তিকান্ত দাস স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ছ’মাস মূল্যবৃদ্ধির হার চড়া থাকবে। আর আগামী দু’মাসে জিনিসপত্রের দাম শিখর ছোঁবে। আগামী আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের পর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অর্থনীতির যাবতীয় তথ্য, ব্যাঙ্কিং পরিসংখ্যান এবং মুদ্রাস্ফীতি বিশ্লেষণ করে থাকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তাদের এই পূর্বাভাস সাধারণ মানুষের উদ্বেগ যেমন বাড়াবে, ঠিক তেমনই অস্বস্তিতে ফেলবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। বাজেটের ঠিক পরেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নীতি নির্ধারণ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠক ঘিরে অর্থনৈতিক ও শিল্প মহলের প্রবল আগ্রহ ছিল। দেখা গেল, সরকারের উল্টো পথে হেঁটে আর্থিক মন্দা ও মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুতে রীতিমতো সতর্ক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। মুদ্রাস্ফীতির হার তথা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ তো বটেই, জিডিপি বৃদ্ধির হার নিয়েও অর্থমন্ত্রকের মতো আশাবাদী নয় তারা। নীতি নির্ধারণ কমিটির বৈঠকের পর দু’টি প্রধান সিদ্ধান্ত থেকেই মনোভাব স্পষ্ট করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। প্রথমত, আগামী আর্থিক বছরের জিডিপি বৃদ্ধির হার হতে পারে ৭.৯ শতাংশ। খুব বেশি হলে। আর সেটাও একঝাঁক শর্তসাপেক্ষ। অথচ অর্থমন্ত্রক অর্থনৈতিক সমীক্ষায় জানিয়েছিল, জিডিপি বৃদ্ধির হার হতে পারে ৮.৫০ শতাংশ। দ্বিতীয়ত, এবারও রেপো রেট এবং রিভার্স রেপো রেট অপরিবর্তিত রেখেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। অর্থাৎ মূল্যবৃদ্ধির ভ্রুকুটি যে থেকেই যাচ্ছে, তা স্বীকার করে নিচ্ছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
পাশাপাশি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমান, আগামী আর্থিক বছরে সাড়ে ৪ শতাংশ হবে মুদ্রাস্ফীতির হার। এই পরিসংখ্যানেও কেন্দ্রের অস্বস্তির বার্তা স্পষ্ট। কারণ বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী অর্থবর্ষে নমিনাল জিডিপি গ্রোথ হবে সাড়ে ১১ শতাংশ। সেক্ষেত্রে যদি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস মতো মুদ্রাস্ফীতির হার হয় সাড়ে ৪ শতাংশ, তাহলে প্রকৃত জিডিপি হার হবে সাড়ে ৭ শতাংশ! এই পরিসংখ্যান কিন্তু অর্থমন্ত্রকের ইকনমিক সার্ভের ঘোষণার তুলনায় কম! নিয়ম হল, জিডিপি এবং মুদ্রাস্ফীতির হার যুক্ত হয়ে নির্ধারিত হয় নমিনাল জিডিপি। বাজেট। ইকনমিক সার্ভে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কোন পরিসংখ্যান ঠিক?