অস্তমিত সঙ্গীতজগতের সন্ধ্যাতারা, শেষ হয়ে গেল গীতশ্রীর পথ…
দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মঙ্গলের সন্ধ্যায় চলে গেলেন গীতশ্রী। ১৯৩১ সালের ৪ ঠা অক্টোবর কলকাতার ঢাকুরিয়ারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।তার মা হেমপ্রভা দেবীও ভাল গান গাইতেন। মাত্র বারো বছর বয়সে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় কলকাতার আকাশবাণীর “গল্পদাদুর আসর” অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন। বারো বছর বয়সেই অল বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্স আয়োজিত সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গুরুর ভূমিকায় পেয়েছিলেন যামিনী গঙ্গোপাধ্যায়, পণ্ডিত সন্তোষ বসু মল্লিক, পন্ডিত চিন্ময় লাহিড়ী, উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খাঁ প্রমুখদের উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খাঁ কে বাবা বলে ডাকতেন তিনি। ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাসে এক চোদ্দ বছর বয়সি এক কিশোরীর কলম্বিয়া থেকে আত্মপ্রকাশ করেছিল। গিরীন চক্রবর্তীর কথায় ও সুরে ‘তুমি ফিরায়ে দিয়াছ’ ও ‘তোমার আকাশে ঝিলমিল করে’। এর দু-বছরের মধ্যেই দুটি বাংলা ছবিতেও নেপথ্যে গাওয়ার সুযোগ পেলেন রাইচাঁদ বড়ালের সঙ্গীত পরিচালনায় ‘অঞ্জনগড়’ এবং রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গীত পরিচালনায় ‘সমাপিকা’ ছবিতে। ওই বছর অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে তিনটি আধুনিক গানের রেকর্ড! ওই বিস্ময়ী কিশোরীর নাম সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বাংলা ছায়াছবির গান, বেসিক আধুনিক গানের কিংবদন্তি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আজ থেকে ওপারের ঠিকানায় পাড়ি দিলেন।
কেবল বাংলা নয়, মুম্বইতেও সুরের যাদু ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ১৯৫০ সালে অনিল বিশ্বাসের সুরে তারানা ছবি দিয়ে হিন্দি গানের জগতে তাঁর হাতে খড়ি হয়। অনিল বিশ্বাসের সুরে তারানা ছবিতে গাইতে গিয়েই লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে পরিচয় হল। লতার সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠের সঙ্গীতটি ছিল ‘বাল পাপিহে বোল রে, তু বোল পাপিহে বোল’। তারপর বন্ধু হয়ে গিয়েছিলেন তারা, বিদায় হল কদিনের হেরফেরে।
১৯৭০ সালে জয়জয়ন্তী এবং নিশিপদ্ম চলচ্চিত্রে তার গানের জন্য সেরা নেপথ্য গায়িকার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। প্রায় ১৭টি হিন্দি চলচ্চিত্রে নেপথ্য গায়িকা হিসেবে কণ্ঠ দিয়েছেন। ১৯৬৬ সালে কবি ও গীতিকার শ্যামল গুপ্তকে বিয়ে করেন।
হেমন্ত মুখার্জীর সঙ্গে হেমন্ত ও সন্ধ্যা বাংলার কিংবদন্তি নেপথ্য কণ্ঠ জুটিতে পরিণত হয়। বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বন্দি মুক্তি উপলক্ষ্যে তার গাওয়া ‘বঙ্গবন্ধু তুমি ফিরে এলে’ বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে বঙ্গবিভূষণ সম্মানে ভূষিত করে। সম্প্রতি পদ্ম পুরস্কার প্রত্যাখান করেছিলেন। তারপরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন, প্রায় ২০ দিন হাসপাতালে থেকে অদম্য লড়াই আজ শেষ হয়ে গেল।