প্রয়াত মায়ের ‘কণ্ঠ’, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জীবনাবসানে শোকস্তব্ধ মুনমুন
একদিন সকালে আমি মা’কে খুব ‘মিস’ করছিলাম। প্রায় আট বছর হয়ে গেল আমার মা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। খুব মনে হচ্ছিল, যদি একবার মায়ের ডাক শুনতে পেতাম। ভাবলাম, একজন আছেন, যাঁকে ফোন করলে আমার মায়ের গলা খুঁজে পাব। আবার, শুনতে পাবো মাকে। ফোন করলাম সন্ধ্যাদিকে (Sandhya Mukherjee)। চিনতাম না খুব একটা ভাল করে। কিন্তু পরিচয় তো ছিলই। সেই ভরসায় ফোন করা।
একজন ধরে বললেন, কাকে চাই? বললাম, সন্ধ্যাদিকে বলুন মুনমুন ফোন করেছেন। সন্ধ্যাদি এসে ফোন ধরলেন। রাখঢাক না রেখেই সন্ধ্যাদিকে সোজাসুজি বললাম, আজ মায়ের গলাটা খুব মিস করছিলাম, তাই তোমাকে ফোন করলাম, আমার মায়ের গলাটা শুনব বলে। হেসে, হঠাৎ তখন সন্ধ্যাদি উলটো আবদার করে বসলেন। বললেন, মুনমুন (Moonmoon Sen), তুমি একটা গান শোনাও তো আমাকে। আমি তো থ। বুঝতে পারছি না কি বলবো। গানের ‘গ’ও জানি না আমি। কিন্তু সন্ধ্যাদি নাছোড়, বললেন গাইতেই হবে তোমাকে। অনেক জোর করা সত্ত্বেও যখন দেখলেন, আমি বাস্তবিকই গান জানি না, তখন নিজেই বললেন, আমি তোমায় শোনাচ্ছি একটা গান।
শুরু হল বিখ্যাত কণ্ঠস্বরের যাত্রাপথ– ‘ঘুম ঘুম চাঁদ ঝিকিমিকি তারা এই মাধবী রাত, আসেনি তো বুঝি আর জীবনে আমার’। মোহিত হয়ে গেলাম গলাটা শুনে। গানটির দু-কলি মাত্র শোনালেন, কিন্তু তাতেই যেন আকৈশোর স্মৃতি নিয়ে হেসে উঠল। সে-ই অমলিন গলা! সে-ই জাদু। মাকে মিস করায় যা শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল, নিমেষে দু’লাইন গান গেয়েই দূর করলেন সন্ধ্যাদি।
মা বলত, সন্ধ্যা না থাকলে, আমার কাজ অনেক বেশি শক্ত হত। বিশ্বের কাছে মায়ের কণ্ঠ তো ছিলেন সন্ধ্যাদিই। কেন, সেদিন তা টের পেয়েছিলাম। গানের ভুবনের উত্তম-সুচিত্রা তো হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আর সন্ধ্যাদি। স্বর্ণযুগের স্বর্ণকণ্ঠ। আজ আর সেই স্বর্ণযুগের কেউ রইল না।
সেদিন না হয় সন্ধ্যাদির গলার আশ্রয় পেয়েছিলাম। এখন মা’কে মিস করলে আর কাকে ফোন করব? আর ফোন করার কেউ রইল না। ২০১৪ সালে মা চলে গিয়েছিল। ২০২২ সালে আমার মায়ের কণ্ঠও চলে গেল আকাশপথের ওপারে, না ফেরার দেশে, লীন হল সন্ধ্যাতারায়।