কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে প্রচারে, মানুষের প্রশ্নের মুখে বিজেপি বিধায়করা
কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষীদের ঘেরাটোপে থাকা বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে প্রচারে নেমেছেন আরামবাগ পুরসভার গেরুয়া শিবিরের প্রার্থীরা। স্থানীয় ভোটে বিজেপির এমন প্রচার নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন পুরসভার বাসিন্দারাই। গুটিকয়েক দলীয় সদস্য ও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে প্রার্থীদের প্রচার ঘিরে দলের অন্দরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। তৃণমূল প্রার্থীরা যখন এলাকার দাদা-দিদির পরিচয়ে মানুষের কাছে যাচ্ছেন, তখন বিজেপির নিরাপত্তায় মোড়া প্রচার ঘিরে শহরের নাগরিকরা সমালোচনা শুরু করেছেন।
পুরভোটে এলাকার বাসিন্দাদের দাবিদাওয়ার বিষয় সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। উন্নয়মূলক কাজের সঙ্গেই স্থানীয় জনসংযোগ ভোটে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সেখানে কেন্দ্রীয় নিরপত্তারক্ষী নিয়ে বিজেপি বিধায়কদের প্রচারে অবাক অনেকেই। শহরের বাসিন্দারা বলেন, আরামবাগের পুরভোটে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। পুরভোটেও ‘হাইপ্রোফাইল’ এই প্রচার বিজেপি আমদানি করছে। স্থানীয় প্রার্থীরা এলাকার পরিচিত মুখ। বাসিন্দাদের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক পাড়ার দাদা বা দিদির মতো। এলাকার বাসিন্দারা অভাব অভিযোগ নিয়ে তাঁদের কাছেই যান। রাজনীতির মধ্যে ব্যক্তি পরিচয় পুরভোটে অনেকটাই প্রভাব ফেলে। সেখানে বিজেপির পুরসভার প্রার্থীদের বিধায়ক ও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় প্রচার এলাকার সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছেন না। এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, নিরাপত্তারক্ষী থাকায় নিজেদের স্থানীয় সমস্যার কথা বিরোধী শিবিরের প্রার্থীদের কাছে তুলে ধরতে পারছেন না বাসিন্দারা।
আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল সভাপতি রামেন্দু সিংহরায় বলেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে আরামবাগে বিজেপির আর কোনও যোগাযোগ নেই। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে বিজেপি বিধায়কদের এই প্রচার সেটাই তুলে ধরছে। যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন তাঁরা তো এলাকারই মানুষ। পুরসভার বাসিন্দারা যাঁদের যোগ্য মনে করবেন তাঁদের নির্বাচিত করবেন। গণতান্ত্রিক এই পদ্ধতিকে তৃণমূল মান্যতা দেয়। আমরা সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করি। তাঁদের একজন হয়েই আমাদের প্রার্থীরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রচার করছেন।
আরামবাগ শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ সিংহরায় বলেন, আমাদের দলের বর্ষীয়ান নেতা থেকে প্রার্থী ও দলের কর্মীরা সকলেই এলাকার পরিচিত মুখ। শহরের বাসিন্দারা প্রচারে সামনাসামনি আমাদের কাজের প্রশংসা করছেন। আবার অভাব অভিযোগ ও দাবি দাওয়ার কথাও তুলে ধরছেন। তবে বিজেপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি অন্য ধরনের। তারজন্যই হয়তো পুরভোটে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে বিধায়করা দলের প্রার্থীদের নিয়ে প্রচার করছেন।
বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তথা পুরশুড়া বিধানসভার বিধায়ক বিমান ঘোষ বলেন, নিরাপত্তারক্ষী থাকার সঙ্গে পুরভোটের কোনও সম্পর্ক নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থা সব সময়ের জন্য থাকে। তাই প্রচারের সময় আমাদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। ওয়ার্ডের বাসিন্দারা আমাদের সামনে নানা অভাব অভিযোগ তুলে ধরছেন। আমরা তাঁদের পাশে থাকার জন্য আশ্বস্ত করছি।
বিজেপি নেতা অরবিন্দ সমাজি বলেন, নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে প্রচার বিজিপিকে কিছুটা হলেই ব্যাকফুটে ঠেলে দিচ্ছে। এই বিষয়টি দলের দ্রুত দেখা উচিত।
আরামবাগের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা দাস বলেন, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে বিজেপির পাড়ার প্রচার আমাদের কিছুটা অবাকই করছে। নিরপত্তরক্ষী বেষ্টিত বিধায়কদের সঙ্গে বিজেপির প্রার্থীরা পাড়ায় প্রচারে এলে স্বাভাবিকভাবেই বাসিন্দারা কথা না বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।