এক নজরে ফিরে দেখা যাক গীতশ্রীর গাওয়া সোনালী গানগুলির মধ্যে অন্যতম সৃষ্টিকে
হয়ত একেই বলে যুগাবসান। মাত্র কয়েকদিনের ব্যাবধানে চলে গেলেন সঙ্গীত জগতের আরও এক মহীরুহ গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। আধুনিক বাংলা গানকে যেসকল কিংবদন্তী শিল্পীরা আকাশচুম্বী উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন তাঁদের কথা স্মরণ হলে প্রথমেই আসে গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের নাম। সুবর্ণ যুগ থেকেই তাঁর গান, সুর ও কণ্ঠ মোহিত করেছে বাংলার আপামর শ্রোতাদের। কখনও ভুলতে না পাড়া কালজয়ী বাংলা গানের অফুরন্ত ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সুরেলা কণ্ঠে আর উদাত্ত সঙ্গীত পরিবেশনায়, যার তালিকা তৈরি করা প্রায় অসম্ভব হলেও এক নজরে ফিরে দেখা যাক গীতশ্রীর গাওয়া সোনালী গানগুলির মধ্যে অন্যতম সৃষ্টিকে।
এ শুধু গানের দিন
এ শুধু গা্নের দিন এ লগনও গান শোনাবার, এই গানের কথার মতই গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জীবনের প্রতিটি লগ্নই গান দিয়ে শুরু হত আর গানেই সিমাবদ্ধ থাকত। ১৯৫৭ সালের বাংলার চিরন্তন উত্তম-সুচিত্রা জুটি অভিনীত আগ্রদূতের পরিচালনায় ‘পথে হল দেরি’ চলচ্চিত্রের এই গানটি এখনও সমান ভাবে আকর্ষণীয় শ্রোতাদের কাছে। গানের কথা লিখেছিলেন প্রখ্যাত লেখক তথা গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সঙ্গীত পরিচালক রবিন চট্টোপাধ্যায়।
গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু
অগ্রদূতের পরিচালনায় ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত চলচ্চিত্র ‘অগ্নি পরীক্ষা’ বাংলা সিনেমা জগতের অন্যতম মাইল স্টোন হয়ে রয়েছে। মহানায়ক উত্তম কুমার ও মহানায়িকা সুচিত্রা সেন অভিনীত এই ছবির প্রতিটি গানই ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে রয়েছে। তারই মধ্যে ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু আজ স্বপ্ন ছড়াতে চায়’ গান যতবারই শোনা হোক না কেন তাতে মন ভরেনা। প্রানে আবেশ ছড়ানো এই গানটিও লিখেছেন গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুর দিয়েছেন অনুপম ঘটক।
মায়াবতী মেঘে এল তন্দ্রা
আধুনিক বাংলা গানের মাত্রা তিওর পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন যিনি তিনি গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তাঁর বহু অনন্য গানের মধ্যে একটি হল ‘মায়াবতী মেঘে এল তন্দ্রা’ মিউজিক অ্যালবাম ‘চয়নিকা’র অন্তর্গত এই গানে গীতশ্রীর উৎকৃষ্ট শিল্পের নিদরশন পাওয়া যায়। গানের সুরকার নচিকেতা ঘোষ। গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার।
আমাদের ছুটি ছুটি
সোনা ঝরা খুশি ভরা মিষ্টি আলোর ওড়না উড়িয়ে সেই কোন কাল থকে বাংলা গানকে সমৃদ্ধ করে এসেছেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। উত্তম কুমার ও অপর্ণা সেন অভিনীত চলচ্চিত্র ‘জয় জয়ন্তি’ সিনেমার চির সবুজ গান আমাদের ছুটি ছুটি চল নেবো লুটি ওই আনান্দ ঝর্ণা। এই গানের জন্য ১৯৭১ সালে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। গানের লেখক শ্যামল গুপ্ত এবং সুরকার আরও এক প্রখ্যাত শিল্পী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়।
এই পথ যদি না শেষ হয়
রোম্যান্টিক বাংলা সিনেমা, উত্তম কুমার সুচিত্রা সেন জুটি, প্রেমের জোয়ার আর একগুচ্ছ নস্টালজিয়া, এই সবকিছুর একটাই নাম, সপ্তপদী। বাংলা ও বাঙালীর মননে যদি সূর্যের মতই অমর কিছু থেকে থাকে তা হল বাইকে করে আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে কৃষ্ণেন্দু আর রিনা ব্রাউনের সেই গান’এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হত তুমি বলত’। এই গানটি মূলত ছিল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়য়ের কণ্ঠে। কিন্তু সেখানে যদি আদর্শ রিনা ব্রাউনের কণ্ঠ কেউ হয়ে থাকেন তিনি নিঃসন্দেহে গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ১৯৬১ সালের এই ছবি এখনও বাংলা চলচ্চিত্রে অন্যতম শ্রেষ্ঠ। সারেগামা-র ব্যানারে এই গানের সুরকার ছিলেন স্বয়ং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
চম্পা চামেলি গোলাপেরই বাগে
খুব কোন গান রয়েছে যা বাংলার দুই কিংবদন্তী শিল্পী মান্না দে ও গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের যৌথ সঙ্গীত। তার মধ্যে একটি হল ‘অ্যান্টেনি ফিরিঙ্গী’ ছবির গান চম্পা চামেলি। উত্তম কুমার তনুজা অভিনীত সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ১৯৬৭ সালের এই সিনেমায় অভিনয় করার জন্য প্রথম জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন মহানায়ক। গানের সুরকার ছিলেন অনিল বাগচি।
কেন এ হৃদয়
মহানায়ক উত্তম কুমার ও অঞ্জনা ভৌমিক অভিনীত সুপারহিট ফিল্ম ‘নায়িকা সংবাদ’। এই চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় গান ‘কেন এ হৃদয় চঞ্চল হল কে যেন ডাকে বারে বারে’ অগ্রদূত পরিচালিত এই সিনেমা সেই বছর অর্থাৎ ১৯৬৭ সালে জুবিলি হিট হয়েছিল।
এস মা লক্ষ্মী
সনাতন বাংলার সেরা ঐতিহ্য হল কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। আর লক্ষ্মী পুজো মানেই প্রতিটি ঘরে ঘরে একটাই গান ভেসে আসে। তা হল ‘শঙ্খ বাজিয়ে মা কে ঘরে এনেছি। এস মা লক্ষ্মী বসো ঘরে।’ ৭০-এর দশকে পুজর গানের রমরমায় এই গান সেই সময়ের সেরা হিট ছিল।
রাগ যে তোমার মিষ্টি
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের অন্যতম সুপারহিট গান ‘রাগ যে তোমার মিষ্টি ওগো অনুরাগের চেয়ে’। ১৯৬৯ সালের জুবিলি হিট এই সিনেমায় প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন স্বরূপ দত্ত ও তনুজা। সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন পবিত্র চট্টোপাধ্যায়।
এ গানে প্রজাপতি
উত্তম কুমার তনুজা অভিনীত সুপারহিট সিনেমা ‘দেয়া নেয়া’তে একটি গানই গেয়েছিলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। আর সেই গানটিই পরবর্তীতে এই ছবির সেরা গান হিসেবে জনপ্রিয় হয়। ‘এ গানে প্রজাপতি পাখায় পাখায় রঙ ছড়ায়’। আর এবার সীমানা ছাড়িয়ে চিরদিনের মত অজানার উদ্দেশ্যে হারিয়ে গেলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।