পুরভোটে ভরাডুবির জের, শঙ্করের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন বিজেপির অন্দরেই
আটমাসেই ফানুস ফেটে গেল। বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জেতা শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ হেরে গেলেন নিজের কেন্দ্রেরই একটা ছোট্ট ওয়ার্ডে। তৃতীয়স্থানে চলে গিয়েছেন তিনি। তাও আবার নিজের পাড়াতেই। এ নিয়ে দলের অন্দরেই উঠছে প্রশ্ন।
আটমাস আগে সিপিএম থেকে যোগদান করেই তিনি শিলিগুড়ি আসনে বিজেপির টিকিট পান। এভাবে অন্যদল থেকে এসেই তাঁর টিকিট পাওয়া নিয়ে গেরুয়া শিবিরে সেসময়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ দানা বেঁধেছিল। কিন্তু, উত্তরবঙ্গের গেরুয়াঝড়ে শঙ্কর ঘোষ বিপুল ভোটে জিতে বিধায়ক হওয়ায় সেই বিক্ষোভ চাপা পড়ে গেলেও তুষের আগুন জ্বলছিলই।
অভিযোগ, বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ দলের নীতি আদর্শ না মেনে নিজের মর্জিমতো দলকে চালাতে চাইছিলেন। পুরভোটে তাঁকে টিকিট দেওয়া নিয়েও দলের একাংশের আপত্তি ছিল। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে শঙ্কর ঘোষ প্রার্থী হবেন, জানার পর ওই ওয়ার্ডের বিজেপির বহু নেতা-কর্মী তৃণমূলে চলে যান। তারপরও বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব শঙ্কর ঘোষকে গুরুত্ব দিয়ে দলের রাজ্য সম্পাদক করে।
শিলিগুড়ি পুরভোটে বিজেপির হতাশাজনক ফলের পাশাপাশি বিধায়কের লজ্জাজনক পরাজয় গেরুয়া শিবিরের সেই বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা দাঁত, নখ বের করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সোমবার শিলিগুড়ি পুরভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকেই দলের বিভিন্নস্তরে শঙ্কর ঘোষকে নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। তাঁদের বক্তব্য, বিধায়ক নিজের পাড়াতেই জনসমর্থন হারিয়ে তৃতীয়স্থানে নেমে এসেছেন। এতে প্রমাণ হয়, শঙ্কর ঘোষের নেতৃত্বে বিজেপিকে শিলিগুড়ির মানুষ কোনওভাবেই মেনে নিতে চাইছে না। এই অভিযোগে বিজেপিতে বিধায়কের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী নিজেদের ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে বলে দলীয় সূত্রে খবর।
এবারের পুরভোটে শঙ্কর ঘোষ ১৬১৯ ভোট পেয়েছেন। তাঁর ওয়ার্ডে জিতেছেন তৃণমূলের প্রতুল চক্রবর্তী। তিনি পেয়েছেন ২১০২ ভোট। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন নির্দল প্রার্থী বিকাশ সরকার। তিনি পেয়েছেন ২০৯১টি ভোট। গত বিধানসভা নির্বাচনে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি পেয়েছিল ২৯২৩টি ভোট। তৃণমূল পেয়েছিল ২৭৭০ ভোট। ২০১৫ সালে শিলিগুড়ি পুরভোটে ২৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সিপিএমের টিকিটে শঙ্কর ঘোষ তৃণমূল প্রার্থী প্রতুল চক্রবর্তীকে ২৬ ভোটে হারিয়েছিলেন। বিজেপির শিলিগুড়ি জেলা কমিটির এক সদস্য বলেন, বিধায়ক হয়ে শঙ্করবাবু নিজের এলাকায় সংগঠনকে ধরে রাখতে পারেননি। নিজের মর্জিমতো চলে দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। তারজন্যই এলাকার মানুষ তাঁকে এভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক আনন্দময় বর্মন বলেন, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে সংগঠন দুর্বল ছিল। নিজের পাড়াতেই বিধায়কের পরাজয় আমাদের চিন্তায় ফেলেছে। সবকিছু নিয়েই আলোচনা করা হবে।
বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক রাজু সাহা বলেন, আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা ছিল। বিধায়কের হতাশাজনক পরাজয় শহরের মানুষের কাছে বিধায়ক এবং দল সম্পর্কে ভুলবার্তা যাচ্ছে। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সাংগঠনিকভাবে আলোচনা হবে।
বিজেপির জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তুফান সাহা বলেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বিধায়কের এই পরাজয় আমাদের চাপে রাখবে। এ নিয়ে আমাদের দলে আলোচনা শুরু হয়েছে। শঙ্কর ঘোষও পুরভোটের সামগ্রিক ফলে হতাশ। তিনি বলেন, পাড়ায় আমি আমার সেরা গত ছ’বছর দিয়েছি। তারপরও মানুষ হয়তো অন্য কাউকে যোগ্য মনে করেছেন। তবে আমার পরাজয়ের পাশাপাশি শিলিগুড়ি পুরভোটে বিজেপির ফল প্রত্যাশামতো কেন হয়নি, তার অনেক কারণ। এখন আর দোষারোপ করে লাভ নেই। আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে।