প্রথম দিনেই প্রাথমিকে উপস্থিতির হার ৬০ শতাংশের উপর
শৈশব ফিরল স্কুলে। কচিকাঁচাদের কলতানে ভরে উঠল শিক্ষাঙ্গন। দীর্ঘ প্রায় দু’বছর বাদে, বুধবার থেকে খুলে গেল প্রাথমিক স্কুল। সারা রাজ্যেই স্কুলে যাওয়া নিয়ে পড়ুয়াদের উৎসাহ ছিল দেখার মতো। একেবারে কচিদের হঠাৎ ভোরে উঠে স্কুলে ছুটতে বেশ কষ্টও হয়েছে। তবে নতুন বন্ধু পেয়ে সেই কষ্ট ভুলেও গিয়েছে সহজেই। রাতে রাজ্যের তরফে জানানো হয়, এদিন প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকে উপস্থিতির হার যথাক্রমে ৭৩.৩৩ এবং ৬০.৭৩ শতাংশ।
কলকাতা এবং জেলায় স্কুলে আসা নিয়ে পড়ুয়াদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। অভিভাবকেরাও সকাল সকাল উৎসাহের সঙ্গে স্কুলে নিয়ে এসেছেন খুদেদের। বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে বিএসএস স্কুলের এক ছাত্রীর অভিভাবক অরিত্রা দাস বলেন, পুলকার এখনও চালু হয়নি। আমাকে দিয়ে আসা, নিয়ে আসার দায়িত্ব নিতে হচ্ছে আপাতত। সামনের পার্কে বসেই বিশ্রাম নেব। তবে এই পরিশ্রম গায়ে লাগছে না মেয়ের কথা ভেবে। ওদের শৈশবটা শেষ হয়ে যাচ্ছিল। তবে কলকাতার সব স্কুলই যে সব ক্লাস প্রথম দিন থেকে শুরু করতে পেরেছে তা নয়। যেমন শ্যামবাজার এভি স্কুলে এদিন প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস হয়েছে। তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস হবে আজ থেকে। পড়ুয়াদের হাজিরা ছিল ৬০ শতাংশ মতো। রবীন্দ্রনাথ-সহ বহু মনীষীর স্মৃতিবিজড়িত স্কুল ওরিয়েন্টাল সেমিনারি প্রথম দিন খুলতেই পারেনি। কারণ তাদের সাফাই হয়নি। উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতার বেশ কিছু স্কুল প্রথম দিনই ক্লাস চালু করতে পারেনি। মেটিয়াবুরুজের একটি স্কুলের শিক্ষক জানান, তাঁরা প্রথম দিন রুটিন চালু করতে পারেননি। তাই শুধুমাত্র প্রাক-প্রাথমিক এবং চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের ডাকা হয়েছিল। কারমেল হাইস্কুলের ছাত্রী রিশিতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানায়, দীর্ঘ দু’বছর বাদে স্কুলে এসে সবকিছু খুব অচেনা লাগছে। তার মতোই প্রথম দিন খাপ খাইয়ে নেওয়ার সমস্যা ছিল অনেক পড়ুয়ারই। তাই বেশকিছু স্কুল প্রথমদিন পঠনপাঠনের চেয়ে পড়ুয়াদের আত্মবিশ্বাস জোগাতে গান নাচ আবৃত্তির বিষয়গুলি বেছে নিয়েছিল। চলেছে গল্প বলাও। ডিআই অফিস সূত্রে খবর, কলকাতায় গড় হাজিরা ৬২-৬৫ শতাংশ ছিল। জেলার থেকে হাজিরা নিয়ে ছবিটা ছিল খুবই উজ্জ্বল। শিক্ষকরা জানাচ্ছেন, রান্না করা মিড ডে মিল বড় ভূমিকা নিয়েছে এক্ষেত্রে। তবে শুধু মিড ডে মিল খেতেই নয়, সার্বিকভাবে স্কুলে আসার উৎসাহও কাজ করেছে। মুর্শিদাবাদের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৌশিক দাস বলেন, আমাদের স্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার। তাদের সিংহভাগই এসেছিল। তাদের মধ্যে দুপুরের খাবার খেতে চেয়েছে দু’হাজার জন। কোভিড পূর্ববর্তী সময়েও এই সংখ্যা এক হাজারের বেশি হতো না। তাই আয়োজনও ছিল তেমনই। মালদহের একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা সঞ্চিতা সাহা বলেন, হাজিরা আশাব্যঞ্জক হলেও একটি খুব উদ্বেগের বিষয় লক্ষ করেছি। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা প্রায় ভুলে গিয়েছে বললেই চলে। তবে নিয়মিত স্কুল চললে ক্ষতি অনেকটাই সামাল দেওয়া যাবে।
On the first day, primary school attendance was above 60 percent.