শেষ প্রস্তুতি, শিয়ালদহ থেকে মেট্রোর পথ চলা সময়ের অপেক্ষা
অত্যাধুনিক পরিষেবার সর্বোতম ডালি সাজিয়ে যাত্রীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশন। ঝাঁ চকচকে স্টেশন চত্ত্বর। নিমেষে পাতাল প্রবেশে অসংখ্য লিফট, এসকেলেটর। লাইনে দাঁড়ানোর হ্যাঁপা কমাতে অসংখ্য টিকিট কাউন্টার, টিকিট ভেন্ডিং মেশিন। বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য র্যাম্প, নির্দিষ্ট উচ্চতার কাউন্টার, টয়লেট। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত স্টেশন চত্ত্বরে পর্যপ্ত সিসিটিভি, ফায়ার ডিটেকটর। স্টেশনের যাবতীয় সুলুক সন্ধান জানাতে প্রায় প্রতি পদক্ষেপে বাংলা, হিন্দি, ইংরাজি হরফের ইলেকট্রনিক বোর্ড। সবমিলিয়ে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে চলেছে।
এছাড়াও থাকছে শিয়ালদহ ডিভিশনের বিভিন্ন লোকাল যাত্রীদের জন্য নয়া এই মেট্রো স্টেশনে এক বিশেষ সুবিধা। শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকেই কাটা যাবে শহর ও শহরতলির লোকাল ট্রেনের টিকিট। মেট্রোর পাশাপাশি কাউন্টারগুলিতে থাকবেন রেলের কর্মীরাও। অর্থাৎ কোনও যাত্রী সেক্টর ফাইভ থেকে মেট্রোতে চড়ে শিয়ালদহ নামবেন। তারপরে মেট্রোর কাউন্টার থেকেই শিয়ালদহ সাউথ কিংবা মেইন লাইনের গন্তব্যের টিকিট কেটে সোজা প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে যেতে পারবেন।
শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশনে গিয়ে একেবারে শেষ মুহূর্তের কাজের চূড়ান্ত প্রস্তুতি চোখে পড়ল। সবকিছু ঠিক থাকলে মাস খানেকের মধ্যেই শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশন চালু হওয়ার কথা। যদিও মেট্রো সূত্রের দাবি, ফায়ার সেফটির ছাড়পত্র এখনও দমকল বিভাগ থেকে মেলেনি। তার উপরই নির্ভর করছে শিয়ালদহের ট্র্যাকে কবে থেকে মেট্রোর রেক ছুঁটবে। বাড়তি যাত্রী চাপের কথা মাথায় রেখে প্রস্তাবিত এই স্টেশনে থাকছে চার-চারটি প্ল্যাটফর্ম। পাতালে অবস্থিত এই দ্বিতল স্টেশনের প্রথম তলটি মাটি থেকে প্রায় ৯ মিটার নীচে। যেখানে রয়েছে টিকিট কাউন্টার, শৌচালয় সহ একাধিক যাত্রী বান্ধব ব্যবস্থা। টিকিট কেটে স্মার্ট গেট পেরিয়ে মূল প্ল্যাটফর্মে পৌঁছতে আরও প্রায় ৮ মিটার নীচে নামতে হবে যাত্রীদের। মেট্রো ধরতে দু’ধাপে মাটির নীচে প্রায় ১৭ মিটার নীচে যেতে শিলায়দহ স্টেশনে থাকছে ১৮টি এসকেলেটর। প্রবীণ নাগরিক ও বিশেষভাবে সক্ষমদের সহজে মেট্রোর দরজায় পৌঁছে দিতে রয়েছে পাঁচটি আধুনিক লিফট। যার প্রতিটিতে একসঙ্গে ১৬ জন যাত্রী চড়তে পারবেন। দৃষ্টিহীন যাত্রীদের লিফট ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে থাকছে উন্নত ‘ব্রেইল’ বোতামও। টিকিট কাটার ঝঞ্চাট এড়াতে শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশনে থাকছে ৩০টি কাউন্টার। একই সঙ্গে ৭টি টিকিট ভেন্ডিং মেশিন।
তবে ফুলবাগান থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত বর্ধিত রুটে মেট্রো চালু হলেও, তা আপাতত চলবে একটি ট্র্যাকে। শিয়ালদহ থেকে বউবাজারমুখী ট্র্যাকটি আপাতত বন্ধ থাকবে। স্রেফ পূর্বমুখী অর্থাৎ সেক্টর ফাইভগামী ট্র্যাকটি দিয়ে যাত্রী পরিষেবা শুরু হবে। কারণ, বউবাজার অংশে লাইনে এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। সম্প্রতি বউ বাজার থেকে টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) তুলে নেওয়া হয়েছে। সেই অংশকে ঢালাই করে মূল টানেলের সঙ্গে জোড়ার কাজ শেষ হতে আরও প্রায় ৬ মাস সময় লাগবে। জানা গিয়েছে, ফুলবাগান থেকে শিয়ালদহমুখী মেট্রো যাত্রী নামিয়ে ফের ওই লাইন ক্রসওভার করে পূর্বমুখী অর্থাৎ সেক্টর ফাইভগামী ট্রাকে তোলা হবে। তারপর সেক্টর ফাইভগামী যাত্রীদের তুলে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটবে মেট্রো। শিয়ালদহে ডবল ডিসচার্জ অর্থাৎ দু’দিক থেকে যাত্রী নামা উঠার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আপাতত মেট্রোর একদিকের গেট খোলা হবে। যদিও আপদকালীন পরিস্থিতি দু’টি গেট খোলার সন্ধান রাখা হয়েছে।