পক্ষাঘাতগ্রস্ত বৃদ্ধ সম্পূর্ণ সুস্থ হলেন বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্স-এর টেলিমেডিসিনে!
বুধবার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল রাজ্যের চিকিৎসাক্ষেত্রে। স্বপ্ন পূরণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি ডিপার্টমেন্ট-এর (Bangur Institute of Neurosciences) চিকিৎসক বিমান রায়ের।
উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার বাসিন্দা ৮১ বছরের বৃদ্ধ শেখ আব্দুর রহিম সকাল বেলায় হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন। শরীরের একটা দিক সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যায়। আমডাঙা থেকে দ্রুত বারাসত হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল ব্রেন স্টোক, পক্ষাঘাতে আক্রান্ত শেখ আবদুর রহিমকে। ৮১ বছরের বৃদ্ধ আবার কোনওদিন উঠে দাঁড়াতে পারবেন বা হাঁটতে পারবেন… এমন কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই ধরে নিয়েছিলেন রোগীর পরিবার। ছিল মৃত্যুর আশঙ্কাও। কারণ, শেখ আব্দুরের মাথার শিরার মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল। ৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই জমাট রক্ত তরল করার ওষুধ দিতে পারলে তবেই তাঁকে আবার পুরনো জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা যাবে।
কিন্তু হাতে সময় বড় অল্প। তাছাড়া লাগবে বিশেষজ্ঞ নিউরোলজিস্টের মতামত আর প্রেসক্রিপশন। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বারাসত হাসপাতালের সুপার ডক্টর সুব্রত মণ্ডল গ্রিন করিডোর বানিয়ে নিলেন এমার্জেন্সি থেকে সিটিস্ক্যান যাবার পথে। সেখানে অন্য সব কাজ বাতিল করে এই বৃদ্ধের এমার্জেন্সি সিটি স্ক্যান করে সঙ্গে সঙ্গে সেই ছবি টেলি মেডিসিন-এর সাহায্যে পাঠিয়ে দিলেন বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্স-এর (Bangur Institute of Neurosciences)। সেখানে স্নায়ু বিশেষজ্ঞ ডক্টর বিমান রায় তাঁর টিম নিয়ে চব্বিশ ঘন্টা হাজির টেলিমেডিসিন সার্পোট দেবার জন্য গোটা পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জেলা হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারদের।
সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারেরা সেই সিটি স্ক্যান রিপোর্ট দেখে নিশ্চিত করলেন যে এটি হেমারেজ নয়, রক্ত তঞ্চন। ডঃ সুব্রত রায় আর দেরি করেননি। হাসপাতালে ঢোকার আধঘণ্টার মধ্যেই বৃদ্ধকে ইঞ্জেকশন দেন। নবজন্ম পেলেন শেখ আব্দুর রহিম।মৃত্যুর আশঙ্কা তো দূর হলই,তারসঙ্গে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার কোনও আশঙ্কাই আর নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ডঃ বিমান রায় আর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি দীর্ঘ দিনের স্বপ্নের সার্থক রূপায়ণ হয়। এইভাবে আগামী দিনে টেলিমেডিসিনের সাহায্যে আরও অনেক স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীকে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ করে বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার উদ্যোগ নিয়েছেন। শুধুমাত্র মনে রাখতে হবে, যাঁরা রোগীকে ২-৩ ঘন্টার মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে আসতে পারবেন, তাঁরা রোগীকে সম্পূর্ণ পূর্বের অবস্থায় ফিরে পাওয়ার আশা নিয়ে আসতে পারবেন। কারণ যদি ৪ ঘণ্টার মধ্যে ইনজেকশন দেওয়া যায়, তবে পূর্বের অবস্থায় রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়ার আশা থাকে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, ” আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা রোগীর পরিবার এই ভাবে তাঁদের প্রিয়জনকে আবার সম্পূর্ণ সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। স্বাস্থ্য দপ্তরের টেলিমেডিসিনের এক উজ্জ্বল সূচনাকে সাফল্যমন্ডিত করে তুলবেন।”