পুরভোটের মুখে মতুয়াদের নাগরিকত্ব নিয়ে সুকান্তর মন্তব্যে বিতর্কের ঝড়
ভোটে মতুয়াদের ব্যবহার করেছে বিজেপি। স্বয়ং এই অভিযোগ করেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। সেই ধারাকে অক্ষুণ্ণ রেখে বৃহস্পতিবার ‘মতুয়া গড়’ বনগাঁয় ভোটপ্রচারে এসে নাগরিকত্ব ইস্যুকে (সিএএ) ফের উস্কে দিলেন পদ্ম পার্টির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এদিন তিনি বলেন, ‘নবান্নের বিরোধিতার জন্যই বাংলায় সিএএ কার্যকর করা যাচ্ছে না। তবে আজ হোক কিংবা কাল, উদ্বাস্তু সহ মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেবে বিজেপি। রাজ্য সরকারের জন্য দেরি হচ্ছে। তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে এর জন্য ভিন্ন উপায় ভাবতে হচ্ছে।’ কী এই ভিন্ন উপায়? তা অবশ্য খোলসা করেননি সুকান্তবাবু। যা নিয়ে ফের তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কেননা, কেন্দ্রীয় এই আইন প্রয়োগের সুনির্দিষ্ট বিধি বা রুলস গত চার বছরেও তৈরি করতে পারেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে কীভাবে এই আইন কার্যকর হবে, তার স্পষ্ট দিশা নেই। তবে কি স্রেফ ভোটব্যাঙ্ক নিরাপদ রাখতে এই স্পর্শকাতর ইস্যু উস্কে দেওয়া হল, উঠছে সেই প্রশ্নও!
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের শীর্ষ নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে বাইপাস করে কোনও আইন কার্যকর করার সংস্থান সংবিধানে নেই। তবে মোদি সরকার ধারাবাহিকভাবে অসাংবিধানিক কাজ করে যাচ্ছে।’ সিএএ’র টোপ দিয়ে বিধানসভায় বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে। তাই অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে করোনা পরবর্তী সময়ে মানুষের মুখে অন্ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে বিজেপিকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ফিরহাদ। দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘রাজ্যকে এড়িয়ে সিএএ চালু করা যায় কি না, সেটা সংবিধান বিশেষজ্ঞরাই বলতে পারবেন। এ বিষয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই।’ তবে সুকান্তবাবু সাংসদ। অর্থাৎ কেন্দ্রের প্রতিনিধি। পাশাপাশি রাজ্য সভাপতিও। তাই বাংলার মানুষের দাবি বা চাহিদার কথা তিনি বলতেই পারেন বলে জানিয়েছেন দিলীপবাবু।
এদিন উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় সুকান্ত মজুমদারের একাধিক কর্মসূচি ছিল। মধ্যমগ্রামের দোলতলায় ‘চায়ে পে চর্চা’য় অংশ নেন তিনি। এরপর হাবড়া, গোবরডাঙায় পুরভোটের প্রচারে অংশ নেন বালুরঘাটের বিজেপি এমপি। এদিন বনগাঁর বনবিহারী কলোনি থেকে দলের প্রার্থীদের সমর্থনে একটি র্যালিতেও অংশ নেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। এরপর মতিগঞ্জ, বিএসএফ ক্যাম্প হয়ে র্যালি শেষ হয় বনগাঁ স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়। সম্প্রতি দলের নয়া জেলা সভাপতি নিয়োগ ইস্যুতে শান্তনুর নেতৃত্বের হাফ ডজনের বেশি বিজেপি বিধায়ক ‘বেসুরো’ হয়েছিলেন। সিএএ নিয়ে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগও আনা হয়েছিল। তাই পুরভোটের আগে মতুয়াদের ক্ষোভে সাময়িক প্রলেপ দিতেই সুকান্তের এই মন্তব্য বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।