যোধপুর পার্কের ক্যাফেতে তোলাবাজি কাউন্সিলার ঘনিষ্ঠদের, ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী
যোধপুর পার্ক উৎসবকে সামনে রেখে স্থানীয় ক্যাফেতে তোলা চাওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার তুমুল শোরগোল পড়ে গেল। তার জেরে এদিন বিকেলেই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে লেক থানার পুলিস। ধৃতরা হলেন, বিজয় দত্ত, ভূপাল মন্ডল, সনৎ নস্কর, ঝন্টু সিং এবং শত্রুঘ্ন মাহাত। ধৃতদের এলাকায় তৃণমূলের কর্মী বলে পরিচিতি রয়েছে। পাশাপাশি ওই উৎসবকে কেন্দ্র করে তোলাবাজির মতো চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আসায় কড়া অবস্থান নিল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। বিষয়টি স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও কানে যায়। দলের নেতৃত্বের পাশাপাশি তিনি পুলিসকে প্রয়োজনীয় যাবতীয় পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেন। এসবের পরই বৃহস্পতিবার অভিযোগ পাওয়ার পর তড়িঘড়ি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব উৎসব বন্ধ করে দেয়। আগামীকাল থেকে শুরু হয়ে ২৩ তারিখ পর্যন্ত ওই উৎসব হওয়ার কথা ছিল।
ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য চলতি মাসের ১২ ফেব্রুয়ারি। ক্যাফের মালিক স্বরলিপি চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ওইদিন তিন-চারজন ব্যক্তি ক্যাফেতে এসে যোধপুর পার্ক উৎসবের একটি আমন্ত্রণলিপি দিয়ে যান। পাশাপাশি ম্যানেজারকে চেক তৈরি রাখতে বলে যান তাঁরা। এরপর বুধবার রাত পৌনে ন’টা নাগাদ বিজয় দত্তের নেতৃত্বে ওই দলটি ক্যাফেতে এসে চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু আমি চাঁদা দিতে পারব না বলায়, ‘নিজেদের কাউন্সিলরের লোক’ পরিচয় দিয়ে রীতিমতো হুমকি দিতে থাকে। তাঁরা বলেন, চাঁদা না দিলে এখানে ক্যাফে চালানো যাবে না। এমনকী, ওই দলটি ক্যাফে ছেড়ে যাওয়ার আগে আমাকে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়ে যান। গোটা ঘটনাটি মোবাইল ফোনে রেকর্ড করতে গেলে, একজন স্বরলিপির দেবীর হাত মুচড়ে মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেয় বলে অভিযোগ। ঘটনার পর মাঝরাতে দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে স্থানীয় লেক থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্বরলিপি দেবী। থানায় অভিযোগ জানিয়ে পল্লিশ্রীর বাড়ি ফেরার পথে তাঁর গাড়ির পিছু নেয় ১০-১২জনের একটি বাইক বাহিনী। বাধ্য হয়ে তাঁর বন্ধু যাদবপুর থানায় সামনে গাড়ি থামিয়ে দেন। আতঙ্কিত স্বরলিপিদেবী এরপর লেক থানায় ফোন করে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানালে পুলিস এসে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়।
স্বরলিপিদেবীর অভিযোগ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে ৯৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মৌসুমি দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মাত্র দু’মাস হল আমি পার্টিতে এসেছি। আমার কোনও অনুগামী নেই। যারা ওই ক্যাফেতে চাঁদা চাইতে গিয়েছিল তাঁরা সকলেই তৃণমূলের পুরনো কর্মী। কেউ আমার নাম খারাপ করতে এমন কাজ করেছে। আমি তোলাবাজিকে প্রশ্রয় দিই না। দোষীদের কড়া শাস্তি হোক, সেটাই চাইছি।
এদিকে, কলকাতা পুলিসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, স্বরলিপিদেবীর লিখিত অভিযোগের পর উপর মহলের নির্দেশে লেক থানার পুলিস বৃহস্পতিবার সকালে তোলাবাজি, মারধর, হুমকির মতো একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে। পরে বিকেলেই মূল অভিযুক্ত বিজয় দত্ত সহ পাঁচ তৃণমূল কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃত এই পাঁচজনকে আজ শুক্রবার আলিপুর আদালতে তোলার কথা রয়েছে।