পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক সুশান্ত, সিপিএমে আরও গুরুত্ব কমল বুদ্ধ-লাইনের?
‘পদ্মবিভূষণ’ বিতর্কের পর সুশান্ত ঘোষ। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর অসম্মতি সত্ত্বেও পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক পদে উত্তরণ। বারবার খারিজ হচ্ছে বুদ্ধ-লাইন। দলের এই নয়া সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharya)। তবে কি বুদ্ধর ছায়া ক্রমশ ছোট হচ্ছে পার্টিতে? আপাতত এই প্রশ্ন ঘিরে সরগরম আলিমুদ্দিন। একসময়ে গড়বেতার বেতাজ বাদশাকে জেলা সম্পাদকের চেয়ার ছেড়ে দেওয়ায় অসন্তুষ্ট প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন ঘনিষ্ঠ মহলেও। যদিও পার্টির সিংহভাগ এই সিদ্ধান্তে খুশি।
দীর্ঘ প্রায় দু’দশক বঙ্গ সিপিএমে বুদ্ধবাবুই ছিলেন শেষ কথা বলার মালিক। দলের সর্বভারতীয় স্তরেও তিনি ছিলেন অন্যতম ল্যুমিয়র বা পথপ্রদর্শক। তাঁর অমতে এই সেদিনও পাতা নড়ত না আলিমুদ্দিনে। দলের রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণের প্রশ্নে বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে বারবার ছুটে এসেছেন সীতারাম ইয়েচুরির মতো সর্বোচ্চ পদাধিকারী। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিএমের জেলা সম্পাদক পদে সুশান্ত ঘোষের (Suanta Ghosh) মনোনয়ন বুদ্ধদেবের সেই প্রতাপ নিয়ে সংশয় জাগিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। দলীয় নেতৃত্বে তাঁর ঘোর অপছন্দের সুশান্ত ঘোষের উত্তরণে বুদ্ধ-যুগের সূর্যাস্ত দেখছেন রাজ্য-রাজনীতির কারবারীরা।
আলিমুদ্দিনের অন্দরে কান পাতলে বুদ্ধ-সুশান্ত টানাপোড়েনের বহু স্মৃতির প্রতিধ্বনি। গড়বেতার বিধায়ক রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীকে বরাবরই ‘না পসন্দ’ সুকান্ত ভট্টাচার্যর ভাইপোর। কঙ্কালকাণ্ডে অভিযুক্ত নেতাকে নিয়ে অপছন্দের কথা গোপনও করতেন না বুদ্ধবাবুর। তাই বুদ্ধ-জমানায় ভাল মন্ত্রিত্ব সুশান্তের কপালে জোটেনি। পার্টির শৃঙ্খলা মেনে তিনি অবশ্য অসন্তোষ গোপন রেখেছেন।
এর মধ্যে গঙ্গা দিয়ে গ্যালন গ্যালন জল বয়ে গিয়েছে। ক্ষমতার ভরকেন্দ্র পরিবর্তন হয়েছে। বেনাচাপড়া কঙ্কালকাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে জেল খাটতে হয়েছে সুশান্তকে। দীর্ঘ দশ বছরের নিজের জেলায় পা রাখতে পারেননি। কিন্তু কলকাতায় থেকেও জেলা-রাজনীতিতে বারবার নিজের অবস্থান জানান দিয়েছেন। নিয়মিত জেলার কমরেডদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। কমরেডকুলের সমর্থন থাকা সত্ত্বেও বুদ্ধদেবের আপত্তিতেই জেলা সম্পাদকের চেয়ারের কাছে পৌঁছেও ঘুরে আসতে হয়। এর মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পার্টি লাইনের বাইরে গিয়ে কিছু লেখায় সাময়িক বরখাস্ত হন।
তবে জেলা সম্পাদক হতে এবার মরিয়া ছিলেন সুশান্ত ঘোষ। তাই নবনির্বাচিত জেলা কমিটির ‘অফিসিয়াল প্যানেল’ চ্যালেঞ্জ করেন। বাকি সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থনও জোগাড় করেন। ফলে চেয়ার দখলে কোনও সমস্যা হয়নি, আপত্তি করেননি রাজ্যের নেতারাও।
কিন্তু অপছন্দের লোককে সম্পাদকের চেয়ারে বসালে যে বুদ্ধবাবু অসন্তুষ্ট হবেন, তা ভালই জানেন সুর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিম ও রবীন দেবরা। তারপরেও তাঁকেই ‘প্রোমোশন’ দেওয়ায় জল্পনা শুরু হয়েছে আলিমুদ্দিনে। জল্পনার বিষয়বস্তু –পার্টির উপর বুদ্ধবাবুর নিয়ন্ত্রণ কতটা আছে।