নাগরিক প্রতিবাদের সুফল, এনআরসি নিয়ে পিছু হটল কেন্দ্র – নেই বাজেট বরাদ্দ
হম্বিতম্বিই সার। বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং ঘোষণাগুলি নিয়ে ক্রমে ব্যাকফুটে মোদী সরকার। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) রুলস তৈরির সময়সীমা বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। আর এবার সম্ভবত চিরতরে বিদায়ঘণ্টাই বাজছে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসির। সংসদে আগে একাধিকবার তেমন ইঙ্গিত দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু এখন বাজেট বরাদ্দ এবং সরকারের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি থেকে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, এনআরসি নিয়ে আর আগ্রহ নেই মোদি সরকারের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের জন্য বরাদ্দ হওয়া বাজেটে এনআরসি নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য নেই। নেই অর্থ বরাদ্দও। অথচ রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া সেন্সাসের প্রস্তুতি শুরু করতে চলেছে। আগামী এপ্রিল থেকেই পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে জনগণনার প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের কাজ। সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই সেন্সাসের মূল পর্ব সমাপ্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হচ্ছে। বাজেটে তার জন্য বরাদ্দ হলেও এনআরসি নিয়ে মোদি সরকারের মুখে কুলুপ।
অসমের পর গোটা দেশেও এনআরসি হবে—ভোটের সময় বাংলায় এসে দফায় দফায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় নেতারা। তাদের বক্তব্য ছিল, অনুপ্রবেশকারীরা হল উইপোকা। দেশের সম্পদ ক্ষয় করছে। তাদের জন্য উপযুক্ত দাওয়াই হল এনআরসি। স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রচারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ‘বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় এলেই প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদিত হবে সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ)।’ কিন্তু বঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ধরাশায়ী হওয়ার পর থেকে এনআরসি নিয়ে সেই উচ্চগ্রামের প্রচার ক্রমেই স্তিমিত হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক একাধিকবার জানিয়েছে, এনআরসি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি কেন্দ্র। সেই সুরই যে সরকারের দীর্ঘমেয়াদী অবস্থান, সেটা এখন বেশ বোঝা যাচ্ছে। কারণ, এবার বাজেটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ডিমান্ড ফর গ্র্যান্টস থেকে স্পষ্ট যে, এনআরসি নিয়ে আর অগ্রসর হতে নারাজ কেন্দ্র। এই খাতে অর্থ বরাদ্দই হয়নি। সামগ্রিকভাবে সেন্সাস খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৩,৬০০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে জনগণনার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা সম্ভব হয়নি। ২০২১ সালের মার্চ মাসে সেন্সাসের পূর্ণাঙ্গ পরিসংখ্যান ঘোষণার বিষয়টি নির্ধারিত হয়েছিল। কিন্তু গত ডিসেম্বর পর্যন্ত শুমারির প্রাথমিক কাজই করা যায়নি। চলতি বছরে তা শুরু হবে বলে আশাবাদী সরকার। সেন্সাস এবং ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টারের (এনপিআর) কাজ পাশাপাশি চলবে। কিন্তু এনআরসি নিছক প্রচারের ফানুস হয়েই রয়ে যাচ্ছে।এই মুহূর্তে