কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

ক্রেতা সুরক্ষা – খায় না মাথায় দেয়? সাধারণ মানুষকে বুঝিয়েছিলেন সাধন

February 20, 2022 | 4 min read

সাধন পাণ্ডে; উত্তর কলকাতার এই প্রাজ্ঞ রাজনীতিক আজ না ফেরার দেশে। রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন অপরাজেয়। শেষ দশ বছর সামলেছেন রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তর। শুধু সামলেছেন বললে ভুল বলা হয়, ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরকে লালন পালন করে সাবলম্বী করে তুলেছিলেন তিনি।

ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তর কী? কী কাজ করে দপ্তরটি?


অ আ ক খ-এর মতো করে, পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষকে ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের কাজ সম্পর্কে জানিয়েছিলেন সাধন পাণ্ডে।
ফ্ল্যাট কিনে ফেলেছেন কিন্তু এখনও হস্তান্তরিত হয়নি চাবি? গ্যাসের লাইন পেতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হচ্ছেন? কম্পিউটার কিনতে গিয়ে ঠকে গেলেন? এই সব নানান অভিযোগের সমাধান করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তর। উপভোক্তা বা ক্রেতাকে সঠিক পরিষেবা পাইয়ে দেওয়াই ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের কাজ।

Consumer Affairs-Home Page

২০১১ সালের রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রক সামলাতেন সাধন পাণ্ডে। প্রতিবারই তাঁকে ক্রেতা-সুরক্ষা দপ্তরের দায়িত্ব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রী হিসেবে রাজ্যে জনপরিষেবাকে আরও উন্নত করেছিলেন। সাধন পাণ্ডের নেতৃত্বেই ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের কাজের প্রশংসা হয়েছিল রাজ্যজুড়ে। 

Consumer Affairs-Home Page



১৯৯৯ সালে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে এই মন্ত্রকের জন্ম হয়। সে’সময় কৃষি ও কৃষি বিপণন দপ্তরের সঙ্গেই কাজ করত ক্রেতা সুরক্ষা বিভাগ। বাম আমলে ফ্রন্টের শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের হাতেই থাকত ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রকটি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেই ক্রেতা সুরক্ষার বিভাগটিকে নিয়ে পৃথক ও স্বাধীন দপ্তর গড়েন। দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রবীণ রাজনীতিক সাধন পাণ্ডেকে। আদৌ এই দপ্তরের কাজ কী? সে বিষয়ে রাজ্যের মানুষের কোন ধারণাই ছিল না।

Welcome Page

দায়িত্ব পেয়েই অসাধ্য সাধনে নেমে পড়েন সাধন। যেহেতু এই দপ্তরের অনেকটা অংশ জুড়ে রয়েছে জনপরিষেবা, তাই সবার আগে মানুষকে জানানোর কাজ শুরু করেন সাধন পান্ডে। সচেতনামূলক প্রচার, বিজ্ঞাপন সব কিছুতেই অভিনবত্ব নিয়ে আসেন। সাধারণ মানুষকে দিয়ে সরকারি দপ্তরের বিজ্ঞাপন দেওয়ার পথিকৃৎ ছিলেন সাধন। সাধারণের কথা সাধারণ বলার ফলে মানুষের কাছে পৌঁছান আরও সহজ হত। যেমন ধরুন; রমেন হালদার এক ছাপোষা কেরানি৷ কারও সাতেপাঁচে থাকেন না৷ মুখচোরা মানুষটি কস্মিনকালেও তিনি ভাবেননি, একদিন এফএম রেডিওতে তাঁকে ইন্টারভিউ দিতে হবে! তাও আবার দোকানির কাছে বেমালুম ঠকে যাওয়ার জন্য!

Consumer Affairs-Home Page

দোকানে আটা কিনতে গিয়ে ঠকে গেলেন রমেনবাবু৷ স্ত্রীর কাছে ধমক খেয়ে ছুটলেন ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরে মামলা ঠুকতে৷ ফলও পেলেন হাতেনাতে৷ ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের তত্‍পরতায় অচিরেই ক্ষতিপূরণ৷ উপরি পাওনা, বিভিন্ন এফএম রেডিওতে সাক্ষাত্‍কার দেওয়ার সুযোগ৷ ঠিক কী ভাবে তিনি ঠকেছিলেন, এবং কী ভাবেই বা ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের সহায়তায় ক্ষতিপূরণ পেলেন, তারই বিস্তারিত বর্ণনা দিচ্ছেন তিনি৷

Consumer Affairs-Home Page

উপকার পাওয়া ক্রেতাদের রেডিও চ্যানেলে বসানোই হোক বা সমাধান সরকার নামে কাল্পনিক চরিত্র তৈরি করে সাধারণ মানুষকে আকর্ষণ করার কৌশল, বিজ্ঞাপনী অভিনবত্বে সাধন পাণ্ডের টেক্কা দিয়েছিলেন। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ‘জাগো গ্রাহক জাগো’ মর্মে দপ্তরের হোর্ডিং, ক্ষতিপূরণ পাওয়া ক্রেতাদের সাক্ষাত্‍কার এফএম রেডিওয় শোনানো, শহরের রাস্তায় উপকৃত ক্রেতাদের ছবিসহ তাঁদের বক্তব্যও হোর্ডিং আকারে রাখার পরিকল্পনা সবেতেই অগ্রণী সাধন। ​যত প্রচার বাড়তে থাকে তত বেশি পরিমানে অভিযোগ জমা হতে শুরু হয়। প্রতারিত জনগণ সুবিচার পেতে শুরু করেন। দপ্তরের আয় বাড়তে থাকে।

Consumer Affairs-Home Page

রাজ্যের মানুষ কোনও পণ্য কিনে প্রতারিত হলে সহজেই যাতে ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও সাধনের আমলেই করা হয়। সঙ্গে জেলাস্তরেরও ক্রেতা সুরক্ষা বিভাগের বিভিন্ন শাখাকে সক্রিয় করে তোলেন তিনি। পরিষেবাকে নাগরিকদের আরও কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কলকাতা শহরের প্রত্যেকটি বাজারে ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের কমপ্লেন বক্স বসানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। ক্রেতা সুরক্ষা মেলা প্রচলনও হয়েছিল সাধন পাণ্ডের হাত ধরে। প্রত্যেক মহকুমায় ক্রেতা সুরক্ষা অফিস খোলার পরিকল্পনাও তাঁর মস্তিস্কপ্রসূত। রাজ্যজুড়ে অজস্র ক্রেতা সুরক্ষা আদালত তৈরি করেছিলেন, তাঁর আমলে আইন পড়ুয়ারাও দপ্তরের অভিযোগের শুনানিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।

Consumer Affairs-Home Page

ক্রেতাদের অধিকার সুরক্ষিত করতে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে যৌথভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তর কাজ করেছিলেন, মহানগরবাসীর পণ্য ও পরিষেবা পাওয়ার অধিকারের পথকে সুগম করে তুলেছিলেন। সর্বতভাবে ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরকে সাধারণের নাগালের মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন সাধন পাণ্ডে। সহজ করে তুলেছিলেন দপ্তরের পরিষেবাকে, সাধারণ মানুষকে সরকারি দপ্তর থেকে কাজ হাশিল করতে যে জুতোর শুকতলা ক্ষইয়ে ফেলতে হয়, সেই মিথও ভেঙে দিয়েছিলেন সাধন পাণ্ডে।

Consumer Affairs-Home Page
TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #RIP, #sadhan pande, #Consumer Affairs Department

আরো দেখুন