মোদী আমলে দেশবাসীর মাথায় ঋণের বোঝা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি
প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা—নরেন্দ্র মোদীর সাত বছর আগের প্রতিশ্রুতির অন্তর্জলি যাত্রা হয়েছে বহুদিন। আম আদমি সেই আশাও চিতায় তুলে দিয়েছে। প্রার্থনা ছিল একটাই, দু’বেলা দু’মুঠো খাওয়ার পর শান্তির ঘুম। সেও মাঠে মারা গিয়েছে মোদী জমানায়। কারণ, প্রত্যেক দেশবাসীর মাথায় ঋণের বোঝা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে, অর্থাৎ মনমোহন সিং সরকারের আমলের শেষ এবং মোদী জমানার শুরুতে প্রত্যেক ভারতবাসীর গড় মাথাপিছু ঋণের বোঝা ছিল ৪৬ হাজার ৬৯৭ টাকা। সেই অঙ্কই এখন পৌঁছে গিয়েছে এক লক্ষ টাকায়। বাজেটে পেশ করা সরকারি নথি অনুযায়ী সঠিক অঙ্কটি হল, ৯৯ হাজার ৯১৩ টাকা। আজ যে শিশু ভূমিষ্ঠ হচ্ছে, তার মাথাতেও চাপছে এই ঋণের পরিসংখ্যান। সরকারি হিসেবই বলছে, ২০২৩ সালের মার্চ মাসে জনপ্রতি অঙ্কটা পৌঁছবে ১ লক্ষ ১১ হাজার ৮৯৮ টাকায়।
কেন্দ্রীয় সরকারের উপর আর্থিক ঋণের দায়ভার এখন কত? তা জানাতে গিয়ে সংসদে পেশ হওয়া বাজেট নথিতে বলা হয়েছে, চলতি ২০২১-২২ আর্থিক বর্ষে অঙ্কটি হল ১৩৫ লক্ষ ৮৮ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। আর আগামী বছর (২০২৩ সালে) মার্চ মাসে তা বেড়ে হবে ১৫২ লক্ষ ১৮ হাজার ২১০ কোটি টাকা। অথচ এই মোদী সরকারেরই নতুন টার্গেট ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি।
২০১১ সালের জনগণনাকে কেন্দ্র করে সরকারের তৈরি ‘ন্যাশনাল কমিশন অন পপুলেশন রিপোর্ট’ মোতাবেক, ২০১৪ সালে ভারতের জনসংখ্যা ছিল ১২৬ কোটি। ২০২১ সালে বেড়ে হয়েছে আনুমানিক ১৩৬ কোটি। কেন্দ্রের মোট ঋণের পরিমাণকে এই অঙ্ক দিয়ে ভাগ করলেই সামনে এসে পড়ছে উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান। স্পষ্ট হচ্ছে প্রত্যেক ভারতীয়ের উপর ঋণের বোঝা। সেই ঋণ মেটানোর জন্য সরকারের পদক্ষেপ কী? রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি। সেখানেও কিন্তু আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেসরকারি হাতে তুলে দিয়ে মোদী সরকার ২ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা ঘরে তুলবে বলে ঠিক করেছিল। কিন্তু আদতে এসেছিল মাত্র ৪০ হাজার কোটি। একইভাবে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটির টার্গেট রেখেও পরে তা কমিয়ে করা হয় ৭৮ হাজার কোটি টাকা। আর এবার? ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে সেই টার্গেট আরও কমিয়ে মাত্র ৬৫ হাজার কোটি টাকা করেছে মোদী সরকার। ফলে দেশের অর্থনীতির এখন ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা। আর সৌজন্যে, নরেন্দ্র মোদী সরকার।