রক্তে রাঙা ২১ ফেব্রুয়ারির ইতিহাস – আমি কি ভুলিতে পারি?
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙা ২১ ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি? এপার হোক বা ওপার – এমন বাঙালি পাওয়া কঠিন যাদের এই গানটি শুনলে চোখ ভিজে আসে না। মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় ভাষা আন্দোলন ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দিয়ে এই দিনটিকে সম্মান জানিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘও।
মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ১৯৪৮-এর ১১ মার্চ। ৪৮-এর ১১ মার্চ অন্যতম রাষ্ট্রভাষার দাবীতে বাংলার ছাত্রসমাজ প্রথম প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করে। সেদিন যারা মাতৃভাষার দাবীতে রাজপথে সংগ্রাম করে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং শামসুল হক ছিলেন তাদের অন্যতম।
১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন সংলগ্ন আমতলায় ছাত্রসভা। সরকার আরোপিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রস্তুতি। ছাত্রসভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১০ জন মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙবে। ছাত্রসমাজ প্রতিবাদ মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙলো। পুলিশ বাহিনী গুলি ছুঁড়লে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকে শহীদ হন।
১৯৬৯-এর গণআন্দোলনের সর্বব্যাপী গণবিস্ফোরণ ঘটে একুশে ফেব্রুয়ারিতে। সেদিনও খুলনায় পুলিশের গুলিতে ১০ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়। ’৬৯-এর ১৭ জানুয়ারি ১১ দফার দাবীতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, একুশে ফেব্রুয়ারি তা পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে।
’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের চেতনা ’৬৯-এর গণআন্দোলনের বাঁধভাঙা জোয়ারে পরিপূর্ণতা লাভ করে। ১৭ বছরের সমস্ত দৃষ্টান্ত ভঙ্গ করে ঢাকা নগরের অধিবাসীগণ অভূতপূর্ব প্রাণচাঞ্চল্যের মাধ্যমে মহান ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের পবিত্র স্মৃতির প্রতি প্রাণঢালা শ্রদ্ধাজ্ঞাপন এবং প্রশাসনের সর্বত্র বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার জোর দাবী উত্থাপন করে। ’৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির সংগ্রাম কেবলমাত্র বাংলা ভাষার সংগ্রাম ছিল না। এ সংগ্রাম ছিল গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ও বাংলা ভাষীদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস।
এরপর ’৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ মিনারের পবিত্র বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর বলেছিলেন, ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দিব না। চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকারের জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। জননী জন্মভূমির বীর শহীদদের স্মরণে শপথ নিয়ে বলছি যে, রক্ত দিয়ে হলেও বাংলার স্বাধিকার আদায় করবো।’ বাকিটা ইতিহাস।
আজও ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’। বিশ্বজুড়ে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে মর্যাদার সাথে পালিত হচ্ছে দিনটি। বাঙালি হিসেবে গর্বের দিন আজ।