পেনশনের টাকা বাড়ানোয় অনীহা মোদী সরকারের
বেসরকারি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের বেঁচে থাকার অন্যতম ভরসা পিএফের পেনশন। তারই ন্যূনতম অঙ্ক থমকে রয়েছে এক হাজার টাকায়। এই টাকার পরিমাণ বাড়ানো হোক—এই দাবি দীর্ঘদিনের। তবে তাতে কান নেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের। তাদের অজুহাত, ন্যূনতম পেনশন বাড়ানোর জন্য তহবিলে যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন, তার দিশা নেই। সত্যিই কি তাই? তথ্য জানার অধিকার আইনে এক ব্যক্তির প্রশ্ন ছিল, পেনশন মেটাতে কত টাকা খরচ হয় সরকারের? সেই প্রশ্নের জবাব দেয়নি শ্রমমন্ত্রকের আওতায় থাকা এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন বা ইপিএফও। এমনকী কতজনকে তারা পেনশন দেয়, সেই জবাবও পাওয়া যায়নি আরটিআইতে। দায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে অন্য দপ্তরে। কিন্তু এসব ছলচাতুরির পরও বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে ঝুলি থেকে। ইপিএফওর পেশ করা বাৎসরিক আয়ের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, চাইলেই পেনশনের অঙ্ক অনেকটা বাড়ানো যায়। কিন্তু সেই পথে না হেঁটে লক্ষ লক্ষ বয়স্ক নাগরিকের জীবন যন্ত্রণা বাড়িয়ে কোষাগার ভরছে মোদী সরকার।
আরটিআইয়ের জবাবে ইপিএফও জানাচ্ছে, তাদের হাতে রয়েছে মোট ১৫ লক্ষ ৬৯ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে পেনশন স্কিমের জন্য তারা পিএফ গ্রাহকদের থেকে ৫ লক্ষ ৭৯ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা আদায় করেছে। কর্মচারীর বেতন থেকে যে ১২ শতাংশ কেটে নিয়ে পিএফে জমা করা হয়, তার ৮.৩৩ শতাংশ যায় পেনশন খাতে। এটা সেই টাকা। পিএফ কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, পেনশন খাতে জমা হওয়া এই বিপুল অঙ্ক বাজারে খাটিয়ে তাদের বছরে আয় হয় ২৯ হাজার ৮৯ কোটি টাকা।
এবার দেখে নেওয়া যাক, সরকার কতজনকে পেনশন দেয়? আরটিআইতে এর জবাব না দিলেও ইপিএফও তাদের সাম্প্রতিক একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানাচ্ছে, মোট পেনশন প্রাপকের সংখ্যা ৬৬.৭৬ লক্ষ। সেই বিজ্ঞপ্তিতেই তারা দাবি করেছে, ২০১৪ সালে ডিজিটাল লাইফ সার্টিফিকেট চালু হওয়ার পর তা জমা করেননি ১৪.৭৮ লক্ষ পেনশন গ্রাহক। অর্থাৎ সরকার তাদের পেনশন দিচ্ছে না। সেক্ষেত্রে পেনশন পাচ্ছেন ৫২ লক্ষ প্রবীণ। অন্যদিকে সরকার দাবি করছে, তারা ন্যূনতম পেনশন দিচ্ছে এক হাজার টাকা। অথচ আরটিআইতেই তারা জানিয়েছে, ২৩ লক্ষ গ্রাহক নানা কারণে এক হাজার টাকার অনেক কম পেনশন পান।
তাহলে সরকার পিএফের পেনশন বাবদ কত টাকা খরচ করে? এই প্রশ্নের উত্তর তারা আরটিআইতে দেয়নি। যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যায় ৫২ লক্ষ গ্রাহক মাসে দু’হাজার টাকা পেনশন পান, তাহলে সরকারের বছরে খরচ হয় ১২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। অথচ শুধু পেনশন খাতে আদায় করা টাকা খাটিয়ে সরকারের আয় হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি। পেনশনের সর্বোচ্চ অঙ্ক বৃদ্ধি নিয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলন চালাচ্ছে ‘ইপিএস-৯৫’-এর আওতায় থাকা ন্যাশনাল অ্যাজিটেশন কমিটি। এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি তপন দত্ত বলেন, ‘সর্বোচ্চ পেনশনের কোনও সীমারেখা এখন নেই ঠিকই, কিন্তু সেই অঙ্ক মাসিক তিন হাজার টাকা পেরিয়েছে—এমন উদাহরণও নেই। আবার এক হাজার টাকার নীচে পেনশন পেয়ে থাকেন ২৩ লক্ষ গ্রাহক। ফলে সরকারের পেনশন বাবদ খরচ অনেক কম। সরকার যা পেনশন দেয়, তার গড় করলে অঙ্কটা দু’হাজার টাকার অনেক কমে এসে ঠেকবে। অন্যদিকে, ইপিএফওর আওতায় দেশজুড়ে যে অফিসার ও কর্মীরা কাজ করেন, তাঁদের বেতন দেওয়া হয় পিএফের তহবিল থেকেই। কেন্দ্রীয় সরকারি চাকুরে হওয়া সত্ত্বেও সরকার নিজের পকেট থেকে এক পয়সাও মেটায় না। আমাদের প্রশ্ন, প্রবীণদের হকের পেনশন না দিয়ে সেই টাকায় কেন সরকারি দপ্তর চালানো হবে? কর্মজীবনে সাধারণ মানুষ যে টাকা পেনশন খাতে জমা করেন, তা গড় করলে মাথা পিছু ২০ লক্ষ টাকায় দাঁড়াবে। তার বিনিময়ে মাত্র এক হাজার টাকা পেনশন কি খুব গ্রহণযোগ্য?’