গ্রামীণ ভারতের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ পৌঁছয়নি’, অর্থমন্ত্রীকে অভিযোগ শিল্পমহলের
শুনতে এসেছিলেন প্রশংসা, আর সাধুবাদ। পেলেন অভিযোগ, ক্ষোভ এবং একরাশ দাবিদাওয়া। দেশের বাণিজ্য রাজধানী মুম্বই। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সপারিষদ হাজির হয়েছিলেন শিল্প মহলের সামনে। প্রধান উপলক্ষ ছিল বাজেট সংক্রান্ত ফিডব্যাক নেওয়া। পাশাপাশি বাজেট কত ভালো হয়েছে, সেই ব্যাখ্যা দিয়ে শিল্প মহলকে লগ্নিতে উদ্বুব্ধ করাও লক্ষ্য ছিল তাঁর। শিল্প মহল কিন্তু তাঁর জন্য লাল কার্পেট বিছিয়ে রাখেনি! বরং প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছে অর্থমন্ত্রীকে। আত্মপক্ষ সমর্থনে রীতিমতো জেরবার হয়েছেন নির্মলা এবং তাঁর মন্ত্রকের একঝাঁক আধিকারিক। কেউ বললেন, ‘গ্রামীণ ভারত আরও কিছু আশা করেছিল বাজেটে। এখনও কিন্তু গ্রামীণ ভারতের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কিছুই পৌঁছয়নি।’ প্রায় সম্মিলিতভাবেই শিল্প পরিচালকদের ক্ষোভ, কী করল সরকার! অনেক কিছু ঘোষণার পরও ব্যাঙ্ক ঋণ পেতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পক্ষেত্র তো বটেই, ব্যবসা বাড়ানো বা শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় লোন পেতে যাতে অসুবিধা না হয়, সেটা আগে নিশ্চিত করুক কেন্দ্র। অর্থমন্ত্রী চাপে পড়ে ব্যাঙ্কিং সেক্টরের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের লোকসান করতে বলছি না। কিন্তু গ্রাহকবন্ধু হওয়ার চেষ্টা করুন।’
টাটা কেমিক্যালসের প্রধান আর মুকুন্দনের প্রতিক্রিয়ায় রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ে যান অর্থমন্ত্রী। টাটা-কর্তার সাফ বক্তব্য, ‘বিগত কয়েক বছরে মহিলা কর্মী ও শ্রমিকরাই সবথেকে বেশি কাজ হারিয়েছেন। মহিলা ওয়ার্ক ফোর্স দ্রুত নেমেছে ভারতের শিল্প-মানচিত্রে।’ অর্থমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘কেন এরকম হয়েছে বলে আপনাদের মনে হয়?’ শিল্প মহলের স্পষ্ট জবাব, লকডাউনের ছাঁটাইপর্বে সবথেকে বেশি সঙ্কটে পড়েছেন মহিলারাই। অর্থমন্ত্রী দায় এড়াতে বলেন, ‘কর্পোরেট মহল তাহলে কী করছে? আপনারাই তো জীবিকার ব্যবস্থা করেন। আপনাদের আরও সতর্ক হওয়া দরকার।’ পরিস্থিতি এমনই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, এক সময় অর্থমন্ত্রকের অন্যতম আধিকারিক টি ভি সোমনাথন শিল্প মহলকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা কী চান? কর্পোরেটে মহিলাদের জীবিকার জন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা হোক? আপনারা যেমন প্রস্তাব দেবেন, আমরা সেভাবে চিন্তাভাবনা করব।’ গ্রাসিম সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সরাসরি তুলে ধরেন বস্ত্রশিল্পের সঙ্কট-প্রসঙ্গ। বলেন, ‘বস্ত্রশিল্পে জিএসটি নিয়ে সরকারের এখনই কিছু ভাবা দরকার। উৎপাদনভিত্তিক উৎসাহ ভাতা প্রকল্প খুব ভালো। কিন্তু সেই ভাতার সুযোগ তো তখনই পাওয়া যাবে, যখন কাঁচামাল অনায়াসে এদেশে মিলবে! কাঁচামালের সিংহভাগ আমদানি করতে হয়। অথচ জিএসটি ১৮ শতাংশ! ’ ট্যাক্স ছাড় দেওয়ার আবেদন জানিয়ে আবার রাজস্ব সচিবের ধমক খান এক শিল্পপতি। তিনি বলেন, ‘আপনি কী চাইছেন? বিমা সেক্টর ট্যাক্স ফ্রি করে দেওয়া হোক?’ ওই শিল্পকর্তা পাল্টা বলেন, ‘অ্যানুইটি এবং মূল পুঁজি—দু’টি থেকেই ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে কেন?’ এরপর পরিস্থিতি সামাল দেন অন্য অর্থমন্ত্রকের আধিকারিক। রিয়েল এস্টেট মহল বলে, ‘আমাদের কথাও একটু ভাবা হোক।’ অর্থমন্ত্রীর জবাব, ‘অনেক ব্যবস্থা করা হয়েছে আপনাদের জন্য।’ কিন্তু সেই ব্যবস্থা কি উৎপাদন ক্ষেত্রকে সুবিধা দিতে পেরেছে? শিল্পপতিদের ক্ষোভ কিন্তু অর্থমন্ত্রীর যুক্তির সঙ্গে সহমত নয়! অর্থাৎ ছবিটা স্পষ্ট—শুধু আম জনতা নয়, বাজেট মধুর হয়নি শিল্প মহলের কাছেও।