আবার ফাটল! মরশুমের শেষে সম্পর্ক ছিন্ন হতে পারে শ্রী সিমেন্ট ও ইস্টবেঙ্গলের
ফের নতুন বিনিয়োগকারী খুঁজতে হতে পারে ইস্টবেঙ্গলকে। যা শোনা যাচ্ছে, চলতি মরসুম শেষ হলেই ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে শ্রী সিমেন্ট। দু’বছর লাল-হলুদের বিনিয়োগকারী হিসেবে যুক্ত থাকার পর আর থাকতে চাইছে না এই সংস্থা।
যদি সত্যিই শেষ পর্যন্ত শ্রী সিমেন্ট সরে যায়, তা হলে ক্লাব কী করবে? এ ব্যাপারে এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না ক্লাব কর্তৃপক্ষ। তাঁরা গোটা বিষয়টি সদস্যদের উপর ছেড়ে দিচ্ছেন। ক্লাবের বক্তব্য, সদস্যরা যা ঠিক করবেন, সেটিই হবে।
ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সময় থেকেই শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে নানা বিষয়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্ঘাত শুরু হয়। গত বছরই সরে যেতে চেয়েছিল শ্রী সিমেন্ট। শেষ মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে তারা থেকে যায়। কিন্তু এ বার আর সম্ভবত কিছুতেই থাকতে চাইছে না শ্রী সিমেন্ট। নিজেদের সিদ্ধান্তে তারা মোটামুটি অনড়। গত বারের মতো শেষ মুহূর্তে নাটকীয় কিছু না ঘটলে তাদের বিদায় মোটামুটি নিশ্চিত।
যা জানা গেল, বিশেষ কোনও একটি বা দু’টি কারণে নয়, ক্লাব কর্তৃপক্ষের সামগ্রিক অসহযোগিতার কথাই বলছে শ্রী সিমেন্ট। তাদের বক্তব্য, দল তৈরির ক্ষেত্রে ক্লাবের থেকে কোনও সহযোগিতা তারা পায়নি। উল্টে নানা সময়ে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত হাতে তিন দিন সময় পেয়ে তারা দল তৈরি করেছে। তার প্রভাব পড়েছে আইএসএল-এ লাল-হলুদের খেলায়। এখনও পর্যন্ত ১৭টি ম্যাচ খেলে মাত্র একটি জিতেছে এসসি ইস্টবেঙ্গল। হারতে হয়েছে ন’টি ম্যাচে। পয়েন্ট তালিকায় ধারাবাহিক ভাবে সবার শেষে থেকেছে তারা। শ্রী সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, দলের খারাপ পারফরম্যান্সের দায় তাঁদের উপর বর্তাচ্ছে। সংস্থার ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
আর্থিক ক্ষতি তো আছেই। জানা গেল, শ্রী সিমেন্ট দু’বছরে ১০০ কোটি টাকার উপর বিনিয়োগ করেছে লাল-হলুদে। প্রথম বছরে তারা ৫৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। পরের বছর, অর্থাৎ চলতি মরসুমে এই অঙ্কটা আরও বেশি। এর মধ্যে আইএসএল-এ অংশগ্রহণের জন্য দিতে হয়েছে সাড়ে ১৮ কোটি টাকা, দল তৈরিতে লেগেছে প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকা, কোচিং স্টাফদের আনতে খরচ হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা, বিমায় লেগেছে ১ কোটি, মাঠ তৈরিতে প্রায় ২৫ লক্ষ, নেটমাধ্যম পরিচালনা করতে প্রায় ৭৫ লক্ষ, দলের গোয়া যাওয়া এবং সেখানে বিভিন্ন কর্মীদের রাখার জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে শ্রী সিমেন্টের। এর সঙ্গে হোটেলে দলকে রাখার জন্য দিতে হয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। শ্রী সিমেন্ট না কি এই দু’বছরে পেয়েছে খুব বেশি হলে ১৪ থেকে ১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্পনসরশিপ থেকে ৪০-৫০ লক্ষ টাকা। বাকিটা আইএসএল খেলে।
এর মধ্যে গোয়ার মাঠ এবং হোটেল নিয়ে ফুটবলাররা অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। ফলে দু’টিই বদলানো হয়। জানা যাচ্ছে, দু’টি ক্ষেত্রেই ‘চক্রান্তের’ গন্ধ পেয়েছেন শ্রী সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, এই সংস্থার কর্তাদের মনে হয়েছে, ক্লাবের কেউ ফুটবলারদের, বিশেষ করে বাঙালি ফুটবলারদের ‘বিদ্রোহ’ করার জন্য সমানে তাতিয়ে গিয়েছেন।
জানা যাচ্ছে, শ্রী সিমেন্ট ‘চক্রান্তের’ গন্ধ পাচ্ছে দলের খেলাতেও। কর্তারা না কি টের পেয়েছেন, প্রায় প্রতি ম্যাচের আগে কলকাতা থেকে গোয়ায় ফোন যায় ইচ্ছে করে খারাপ খেলার জন্য। এ রকমও না কি হয়েছে, ম্যাচ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে হঠাৎ পাঁচ-ছ’জন ফুটবলার এক সঙ্গে বলেছেন, চোটের জন্য খেলতে পারবেন না। শ্রী সিমেন্টের কর্তারা না কি নিজেদের মধ্যে আফশোসও করেছেন এই বলে যে, বাংলার ক্লাবে মূলত বাঙালি ফুটবলার নিয়েই দল তৈরি করতে চেয়েছিলেন তাঁরা, অথচ সেই বাঙালি ব্রিগেডকে ব্যবহার করেই ‘চক্রান্ত’ করা হল।
শেষ পর্যন্ত শ্রী সিমেন্ট যদি লাল-হলুদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তখন বোঝাপড়া কী ভাবে হবে, সেটি একটা বড় বিষয়। জানা গেল, ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে শ্রী সিমেন্টের কোনও চুক্তিই হয়নি (ক্লাব চুক্তিপত্রে সই করেনি), গোটাটাই ‘টার্ম শিট’ আকারে রয়েছে। দায়িত্ব ছাড়ার সময় শ্রী সিমেন্ট ‘স্পোর্টিং রাইটস’ ইস্টবেঙ্গলকে ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু সাত ফুটবলারের বাকি থাকা প্রায় দেড় কোটি টাকার দায় তারা আর নেবে না। তাদের দাবি, তারা দায়িত্বে আসার আগে থেকে এই টাকা বকেয়া রয়েছে। ফলে এটা ক্লাবকেই মেটাতে হবে। শুধু তারা যে ফুটবলারদের সই করিয়েছে, তাদের যাবতীয় টাকা মিটিয়ে দিয়ে বিদায় নেবে শ্রী সিমেন্ট।
গোটা বিষয়টি নিয়ে শ্রী সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। জানা গিয়েছে, ক্লাবের নিজস্ব মাঠ, অ্যাকাডেমি এবং অন্য পরিকাঠামো তৈরির যে পরিকল্পনা তাদের ছিল, তা ধাক্কা খেয়েছে বার বার। তাদের নাকি আগামী কয়েক বছরে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা ছিল। বিদায়বেলায় এই বহুজাতিক সংস্থার আক্ষেপ না কি শুধু এটুকুই। না হলে ক্লাবকর্তাদের ‘ঝঞ্ঝাট’ থেকে মুক্তি পেতে তারা বদ্ধপরিকর।
আগামী ৫ মার্চ আইএসএল-এ এসসি ইস্টবেঙ্গলের শেষ ম্যাচ বেঙ্গালুরু এফসি-র সঙ্গে। তার পরেই লাল-হলুদের সঙ্গে সম্ভাব্য বিচ্ছেদের কথা তারা সরকারি ভাবে ঘোষণা করবে।