আজ যোগী রাজ্যে চতুর্থ দফার ভোট, লখনৌয়ের মসনদ কার?
বদলেছেন তিনি অনেক কিছুই। ফৈজাবাদ, এলাহাবাদ অথবা মোগলসরাইয়ের নাম, বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথের মন্দির, এমনকী স্কুলপাঠ্যে ইতিহাসের সিলেবাস। সহজ ছিল সেই বদল। কিন্তু এবার নয়।
কাইজারবাগের সিটি সিভিল কোর্টের আইনজীবী এস জি যাদব গোমতীনগরের এক মক্কেলের হলফনামা তৈরি করছিলেন। ব্যস্ততা পাশে সরিয়ে রেখে বললেন, ‘যোগী আদিত্যনাথ কী করেছেন গত পাঁচ বছরে… যে ইতিহাস বদলে দেবেন? অত সহজ নাকি?’ কী সেই ইতিহাস? ‘গত ৩৭ বছরে উত্তরপ্রদেশে কোনও সরকার টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরেনি। সত্যিকারের উন্নয়ন করেও না। পাঁচ বছর পরই ভোটে হারতে হয়েছে। উদাহরণ, অখিলেশ যাদব। একটা ক্যুইজ কনটেস্ট হয়ে যাক। উত্তরপ্রদেশে অনেকদিন পর ফিরে এসে একজন বহিরাগত কী দেখবেন?’ কেন? হজরতগঞ্জে মেট্রো চলছে! আগ্রা এবং পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে হয়েছে! এসবই তো নতুন? আইনজীবী জানালেন, ‘মোটেই নয়। এসবই তো অখিলেশ যাদবের অনুমোদিত! কাজও শুরু হয়ে গিয়েছিল। যোগীজি আর মোদিজি সবথেকে ভালো যে কাজটি পারেন, সেটাই করেছেন। অর্থাৎ উদ্বোধন! আজও যে কোনও মানুষকে বলুন, অখিলেশ কাজ করেননি। দেখুন কেউ এটা মেনে নেয় কি না!’ অখিলেশ যদি এতই ভালো কাজ করেন, তাহলে হারলেন কেন? মানুষ বোকা নাকি? এস জি যাদবের সুরে সুর মেলাতে এগিয়ে এলেন পুরনো লখনউয়ে চার পুরুষের নিবাসী পূর্ণেন্দ্র সিং গৌতম। বললেন, ‘এই পরাজয় ভালো থেকে আরও ভালোর স্বপ্নে। অর্থাৎ, অখিলেশ ভালো কাজ করছেন। কিন্তু কেন্দ্রে মোদি এবং রাজ্যেও বিজেপি সরকার হলে আরও ভালো কিছু হবে? তাই জিতেছিল বিজেপি। সেই ভুল মানুষ বুঝেছে।’
অর্থাৎ, পরিবর্তনের এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে যোগী আদিত্যনাথ। ২০১৭ সালে আগের সরকারকে ব্যর্থ ও অপদার্থ ঘোষণা করে, রংবেরঙের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন তিনি। এবার যোগীর প্রতিযোগী যোগী নিজেই। পাঁচ বছরে কী কী করেছেন, সেই প্রমাণ অবিরত দিতে হচ্ছে তাঁকে। লখনউয়ের আদালত চত্বরে বসে আইনজীবী পূর্ণেন্দ্র সিং গৌতম বললেন, ‘ওই যেমন সকলেই ধরে নিয়েছিল, বিজেপি বাংলা দখল করবে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরে এলেন…। দেখবেন এখানে সেটাই হচ্ছে। এখন সবচেয়ে বেশি চর্চা কী নিয়ে? অখিলেশ যাদব ভালো ফল করবেন, কিন্তু গরিষ্ঠতা পাবেন না—তাই তো? ১০ মার্চ দেখতে পাবেন, ঝড় উঠেছে। অল্প মার্জিন-টার্জিন নয়। বিপুল গরিষ্ঠতায় জিতবেন অখিলেশ। মিরাকলের জন্য তৈরি থাকুন।’
সিটি সিভিল কোর্টের এই পূর্বাভাস ফলবে কি? অপেক্ষা ১০ তারিখের। কিন্তু কাকতালীয় হলেও সত্যি… ২০০৭ সালে ক্ষমতায় আসা মায়াবতী সম্পর্কে বলা হতো, তিনি উত্তরপ্রদেশে গুন্ডাগর্দি-মাফিয়ারাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। অথচ ২০১২ সালে হেরে গেলেন। অখিলেশ যাদবকে বিকাশযুবা বলা হচ্ছিল। পারলেন না টানা দ্বিতীয়বার জিততে। এবার যোগীর পালা। চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণের ঠিক আগে ইতিহাসের এই ভ্রুকুটি, আর একঝাঁক পথের কাঁটা। কী কী? আজ ভোট উন্নাওয়ে। বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে উত্তাল হয়েছিল দেশ। হাজতে মৃত্যু হয় তরুণীর বাবার। তরুণীকে আক্রমণ করা হয় সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটে। উন্নাও-ক্ষতের যন্ত্রণা আজ কি ভোটযন্ত্রে উগরে দেবেন মহিলারা? আজ ভোট লখিমপুর খেরিতে। অক্টোবর মাসে এই কেন্দ্রেরই টিকুনিয়ায় চলন্ত জিপের নীচে পিষে দেওয়া হয়েছিল কৃষকদের। আজ ভোট লখনউয়ে। রেলে চাকরির দরজা থেকে ফিরে আসা হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর দীর্ঘশ্বাস এখানে ধিকি ধিকি জ্বলছে। প্রয়াগরাজ পর্যন্ত আছড়ে পড়েছে আন্দোলনের আগুন। একটি রামমন্দির এতগুলো আঘাতের উত্তর হতে পারবে তো?
আমির-উদ-দৌল্লা পাবলিক লাইব্রেরির সামনের ফুটপাথ। ঝাঁ ঝাঁ রোদে দাঁড়িয়ে মোবাইলে ঝগড়া করছেন সচিবালয়ের পদস্থ কর্মী কুলদীপ শ্রীবাস্তব। কিন্তু কেন? বোঝা গেল, প্রশাসনিক মিটিংয়ে আসা কুলদীপ বিজেপি সমর্থক। ফোনে তিনি কাউকে বলছেন, ‘তুমি বলো না, এখন রাতবিরেতে আমাদের ভয় থাকে? সব ঠান্ডা করে দিয়েছে যোগী সরকার।’ কিন্তু তাহলে ভরদুপুরে বিজেপির হাই প্রোফাইল নির্বাচনী কার্যালয় এমন ঠান্ডা কেন? তাও লখনউ মধ্য বিধানসভার প্রাণকেন্দ্রে? এত বড় পার্টি অফিসে জনা কয়েক কর্মী! ভোটের চিত্র তো এটা হতে পারে না! সত্যিই বদলের ভোট নাকি?