ঘুরপথে কর্পোরেটদের হাতে দেশের কৃষি ব্যবস্থা তুলে দিতে চাইছেন মোদী?
আন্দোলনরত কৃষক ও বিরোধীদের সম্মিলিত চাপে বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিল করতে বাধ্য হলেও ফের কি ঘুরপথে কর্পোরেটদের হাতেই চাষির ভবিষ্যৎ তুলে দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী? বাজেট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার বিশেষ ‘ওয়েবিনারে’ বারবার কর্পোরেটদের আহ্বানে সেই প্রশ্নই উঠছে। নরেন্দ্র মোদী বলেন, কী ধরনের ফসল হতে পারে, একই জমিতে কীভাবে নির্দিষ্ট সময় অন্তর ভিন্ন চাষ করা যায়, তার জন্য কৃষি বিশেষজ্ঞদের এগিয়ে আসতে হবে। কর্পোরেট জগতের সামনেও অপার সুযোগ। নিশ্চিত লাভ। তাই কর্পোরেটরা সরাসরি কৃষকদের সঙ্গে কথা বলতেই পারেন। বলে নিতে পারেন যে আমার এত পরিমাণ ফসল চাই। সুরক্ষার জন্য ফসল বিমা তো রয়েছেই।
কোনও কোনও রাজ্যে বিশেষ কিছু ফসলের ক্ষেত্রে চুক্তি-চাষ হলেও সার্বিকভাবে বিষয়টিতে কৃষকদের আপত্তি রয়েছে। আশঙ্কার ভিত্তিতেই আপত্তি। জমির মালিকানা চলে যাওয়ার ভয় থেকে চাষের ফসল নষ্ট হলে তার ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত জটিলতাও কম নেই। তা সত্ত্বেও আইন অনুযায়ী চুক্তি-চাষের বিষয়টি আনতে চেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। আন্দোলনের চাপে মাথা নত করেছেন। বাতিল করেছেন আইন। তারপরেও প্রায় একই বিষয় ভিন্নভাবে উল্লেখ করায় ওয়াকিবহাল মহলে প্রশ্ন উঠছে।
বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য কেনা কমানোর লক্ষ্যে ‘ভোকাল ফর লোকালে’র মতো চটকদার স্লোগান ফের শোনালেও খাদ্যশস্যের মার্কেটিং থেকে মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা, জ্বালানি তেলে ইথানল মেশানো, কৃষি সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি সরবরাহের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্পোরেটদেরই এগিয়ে আসার কথা বলেছেন মোদী। বলেন, বাজেটে কৃষি পরিকাঠামোর লক্ষ্যে এক লক্ষ কোটি টাকার তহবিল গড়া হয়েছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের উন্নয়নে আবু ধাবির সঙ্গে চুক্তিও হয়েছে। তবে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ থেকে শুরু করে ২০ শতাংশ ইথানল মেশানোর যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগোচ্ছি, সেখানে বেসরকারি ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসুন। চাষের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্ষুদ্র চাষিদের ভাড়া দিন।
কৃষিমন্ত্রক আয়োজিত বিশেষ ওয়েবিনারের মিনিট কুড়ির বক্তৃতায় বারবার কর্পোরেট শব্দটি উচ্চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, স্বাস্থ্য ঠিক আছে কি না জানতে যেমন পাড়ায় পাড়ায় বেসরকারি প্যাথোলজি ল্যাব রয়েছে, একইভাবে চাষের জমির মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্যও তো বেসরকারি ল্যাব বাড়তেই পারে। ওই পরীক্ষায় কৃষক জানতে পারবেন, কোন জমিতে কোন সার দিলে চাষ ভালো হবে। কর্পোরেটদের সামনে এই ক্ষেত্রে অপার সুযোগ। জায়গায় জায়গায় বেসরকারি মাটি পরীক্ষার ল্যাব খুলুন। বেসরকারি গবেষণাগারের নেটওয়ার্ক তৈরি করুন। সরকারের দায়িত্ব ঝেড়ে কৃষিপণ্যের বিপণনের ক্ষেত্রেও কর্পোরেটদের আহ্বান করেছেন মোদী।