‘ডবল ইঞ্জিন’ মণিপুরে অলিম্পিকে রুপোজয়ী চানুর গ্রামেই নেই পানীয় জল, রাস্তা!
এখনও বছর ঘোরেনি, মীরাবাই চানুর (Mirabai Chanu) অলিম্পিকের পদকজয়ের। কত হইহই দেশজুড়ে, কতশত সম্মান ও প্রতিশ্রুতির পাহাড় তাঁকে ঘিরে। তাঁর আলোয় আলোকিত হয়েছে তাঁর গ্রাম (Village) নংপক কাকচিং। মণিপুরের ইম্ফল শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে এই পাহাড়ি গ্রামে কোথাও যেতে হলে পায়ে হাঁটাই ভরসা। এমনকি এখনও সর্বত্র পৌঁছয়নি বিশুদ্ধ পানীয় জলও (Drinking Water)!
এমনই পরিস্থিতিতে এসে গেছে ভোট। বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা দলে-দলে আসছেন, যাচ্ছেন। তাঁদের সারি সারি গাড়ির ধুলোয় মুখ ঢাকছেন গ্রামবাসীরা। শুনছেন গালভরা প্রতিশ্রুতি। কিন্তু তাঁদের এত বছরের বঞ্চনা, অভিযোগ কে শুনবে! এই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন যেন প্রহসন এ ছাড়া আর কিছুই নয় তাঁদের জন্য। কারণ মীরাবাই যখন অলিম্পিকে দেশকে রুপো এনে দিলেন, তখনই সকলে এত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা সত্যি হওয়ার হলে তখনই হতো।
মীরাবাইয়ের মা সাইখম টম্বি বলছিলেন, “আমাদের গ্রামে খাওয়ার জল নেই। আমরা প্রতি মাসে হাজার টাকা খরচ করে জল কিনি। আর বর্ষার সময়ে রাস্তার যা অবস্থা হয়, কহতব্য নয়। কাউকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যেন অসম্ভব হয়ে ওঠে। বহুবার প্রশাসনকে জানিয়েছি। এই সমস্যা যিনি ঠিক করবেন, আমার ভোট তাঁর জন্যই তোলা থাকবে।”
চানুর গ্রামের একটি স্থানীয় ক্লাবের তরুণ প্রেসিডেন্ট মায়াংগ্লামবাম কেনেডি বলেন, “প্রতিশ্রুতি প্রতিশ্রুতির মতোই থেকে যায়। চানু পদক আনার পরে এখানে পাকা রাস্তা গড়ার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল সে কাজ শুরুর পরে ১৫ শতাংশ হয়ে থেমে গেছে। বলা হয়েছিল এ বছর মার্চে রাস্তা হয়ে যাবে। কোনও চিহ্নই নেই তার। ঘরে ঘরে জলের কথা তো ছেড়েই দিলাম, সরকারের একটা পাইপলাইনও এখনও এসে পৌঁছয়নি।”
ওই ক্লাবের আর এক এক্সিকিউটিভ সদস্য এম জয়ন্তর দাবি আরও দুঃখজনক। তিনি বলেন, “চানু টোকিওতে রুপো জিতে যখন দেশে ফিরল, গ্রামে এল, তখন ও আসার আগে রাস্তার গর্তগুলো বোজানো হল কোনওরকমে। ব্যস, তার পরে আর কেউ ফিরেও তাকাল না। মীরাবাইয়ের নামে গ্রামে একটা জিমন্যাসিয়াম করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার। কোথায় কী!”
শুধু জল এবং রাস্তা নয়, একই সমস্যা শিক্ষা নিয়েও। গ্রামের শিক্ষক এবং ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট কমিটির সদস্য ইয়েংখোম আনন্দ বলেন, “বছরের পর বছর ধরে অবহেলা চলছে নংপক কাকচিং গ্রাম নিয়ে। হ্যাঁ, এখন না হয় কোভিড মহামারীর সময়ে সারা দেশের শিক্ষাই ধাক্কা খেয়েছে, কিন্তু তার অনেক আগে থেকেই এই গ্রামের শিক্ষার চেহারা এমনই ছিল। ক্লাস এইটের বেশি পড়ার উপায় ছিল না গ্রামের সরকারি স্কুলে। এখন সেটা আরও নেমে হয়েছে পঞ্চম শ্রেণি। না আছেন শিক্ষক, না আছে পরিকাঠামো। তাই অনেক দূরে গিয়ে বেসরকারি স্কুলে পড়তে হয় ছেলেমেয়েদের।”
নংপক কাকচিং গ্রামের ৮৫টি পরিবারের ৩০০ জন ভোটার রয়েছেন। লামলাই বিধানসভা কেন্দ্রের আওতায় ভোট দেন তাঁরা। সেখানে পাঁচটি পৃথক রাজনৈতিক দলের পাঁচ জন প্রার্থী ভোটে লড়ছেন এ বছর। প্রথম দফার নির্বাচন হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি।