কেমন কাটছে ইউক্রেনের দিনরাত, জানালেন ইউক্রেনবাসী বেলেঘাটার ছাত্র
রুশ সেনার আগ্রাসন চলছে ইউক্রেনে। যত্রতত্র শোনা যাচ্ছে বোমাবাজির শব্দ। ঘুম ভাঙছে সাইরেনের আওয়াজে। এই পরিস্থিতিতেই সে দেশে আটকে রয়েছেন বেলেঘাটার ছাত্র সৌমাল্য বিশ্বাস। বিদেশের মাটিতে যুদ্ধক্ষেত্রের রোমর্ষক অনুভূতির কথা জানালেন বঙ্গ সন্তান।
কী বললেন তিনি? ঠিক কতোটা নিদ্রাহীনতায় কাটছে তাদের রাতগুলো। কবে ফেরত নিয়ে যাবে নিজের দেশের সরকার! এখন তারই অপেক্ষা।
সৌমাল্য বলেন, যখন তখন সাইরেন বাজছে। সতর্কবার্তা। মার্শাল আইন জারি হওয়ার পরে বেশ কয়েক বার সতর্ক করে সাইরেন বাজানো হয়েছে। পরিস্থিতি আরও বদলে গেলে হয়তো সবাইকে অন্যত্র সরে যেতে হবে। কনকনে ঠান্ডা সে দেশে। তাপমাত্রা প্রায় ৪ ডিগ্রির নীচে।
সৌমাল্য বলে চলেন, বৃহস্পতিবার তার অ্যাপার্টমেন্টে যারা জেগেছিল, বেশি রাতে তারা বার কয়েক বোমার শব্দ শুনেছে। বাইরে থেকে খাওযা-দাওয়া সেরে ঘরে ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন সৌমাল্য। একটা সাইরেনের শব্দে ঘুম ভেঙেছিল। শুক্রবার সকালে রাস্তায় গিয়ে দেখেন, হাওয়ায় বারুদের গন্ধ। সৌমাল্য যেখানে আছেন সেখান থেকে ১০- ১২ কিলোমিটার দূরে রাতে বোমা পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাজধানী কিভ দখল হয়েছে, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখল হয়ে গিয়েছে— এ সব খবর পেলেও ইউক্রেনে জ্যাপরোজিয়া শহরে এখনও ভয়ের তেমন কিছু নেই। জ়্যাপরোজিয়া মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ডাক্তারির তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সৌমাল্য বিশ্বাস। ছোট্ট এই শহর থেকে কিভ আট ঘণ্টার রাস্তা। করোনার সময় যেমন লকডাউন হয়েছিল, এখন সে ভাবেই আছেন বলে মত সৌমাল্যর।
সৌমাল্য আরও বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে এটিএম-এ প্রয়োজন ছিল, তাই বেরিয়েছিলেন তিনি। রাস্তায় ভিড় না থাকলেও এটিএম-এ বিশাল লাইন পড়ে গিয়েছে মানুষের। সে দেশে এটিএমের ব্যবস্থাটা একটু আলাদা। দোকানের সঙ্গে। দোকান, মল, বাজার সবই খোলা আছে। জিনিসপত্রও পাওয়া যাচ্ছে। শপিংমলগুলোতেও ভিড়। যুদ্ধের কথা ভেবেই মানুষ কিছু জিনিস বেশি বেশি কিনে রাখতে চাইছেন বলে ধারণা এই বাঙালি ছাত্রের। মলগুলিতে এত জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে যে বাক্সগুলো ভরে যাচ্ছে। একটার পর একটা বাক্স বদলাতে হচ্ছিল।
জল, বিদ্যুৎ, মোবাইল ফোনের সংযোগ, ইন্টারনেট সবই আছে। এখনও সে সবের কোনও সমস্যা নেই। বেলেঘাটার বাড়িতে যোগাযোগ রাখছেন সৌমাল্য তার বাবা মায়ের সাথে। আগামী ১২ মার্চ দেশে ফেরার বিমান ধরার কথা। তবে এই পরিস্থিতিতে বিমানের টিকিটের দাম এক লাফে তিনগুণ বেড়ে গেছে বলেও জানান বেলেঘাটার ডাক্তারি পড়ুয়া ছাত্র। ৪০- ৫০ হাজারের টিকিট আর এখন পাওয়াই যাচ্ছে না। এক লাখ-দেড় লাখ হয়ে গেছে। আর সরাসরি ফ্লাইটের ভাড়া দু’লাখ হয়ে গেছে। এখন শুধু অপেক্ষা, কখন ভারত সরকার ফেরার ব্যবস্থা করে।