স্বাস্থ্যসাথী খাতে অর্থবরাদ্দ বাড়তে পারে আরও ৫০০ কোটি!
স্বাস্থ্যসাথী খাতে বাৎসরিক অর্থবরাদ্দ বাড়তে পারে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা। বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই স্বপ্নের প্রকল্পে বরাদ্দ ২১০০ কোটি টাকার কিছু বেশি। একদিকে, এই প্রকল্পে দৈনিক ‘ক্লেম’ বাড়ছে, অন্যদিকে, ফের শুরু হওয়া দুয়ারে সরকারের শিবিরগুলিতেও আবেদনের তালিকায় অন্যান্য প্রকল্পগুলিকে ছাপিয়ে ‘মেগাহিট’ স্বাস্থ্যসাথী। ২ কোটি ২৩ লক্ষ পরিবার বা ১১ কোটিরও বেশি মানুষকে প্রকল্পে আনার পরও, আরও মানুষ যুক্ত হতে চাইছে এতে। এমন পরিস্থিতিতে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। এমনই জানিয়েছে রাজ্য সরকারের এক পদস্থ সূত্র।
ওই সূত্র জানিয়েছে, পাঁচ বছর আগে প্রকল্পটি চালুর সময় চিকিৎসাখাতে দৈনিক ‘ক্লেম’ দিতে হতো মাত্র ৩০ লক্ষ টাকার। এখন? ৭ কোটি টাকা! শুরুর সময় প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত ছিল মাত্র ৭০০-৮০০ হাসপাতাল। এখন? ২৩০০ হাসপাতালের বিশাল নেটওয়ার্ক! প্রাইভেট হাসপাতালই রয়েছে ১৫০০’র বেশি। ফলে বাৎসরিক বরাদ্দ বৃদ্ধিই কাম্য। মার্চে বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে। অর্থদপ্তর শেষ পর্যন্ত বাৎসরিক বরাদ্দ বৃদ্ধিতে সিলমোহর দেয় কি না, সেটাই দেখার।
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের খবর, ২০১৭ সালে স্বাস্থ্যসাথী শুরুর সময়ে বাৎসরিক বরাদ্দ ছিল ১২০০ কোটি টাকা। ’১৮ সালেও বরাদ্দ ছিল একই। ২০১৯ সালে উপভোক্তার সংখ্যা একলাফে অনেকটা বৃদ্ধি পায়। কার্পণ্য না করে বাৎসরিক বরাদ্দও বাড়িয়ে ১৬০০ কোটি টাকা করে রাজ্য। দুয়ারে সরকার পর্বে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ওঠে প্রকল্পটি। বাৎসরিক বরাদ্দও বৃদ্ধি পেয়ে হয় ২১২৫ কোটি টাকা।
সূত্রের আরও খবর, কলেবরে বিশাল হয়ে ওঠা প্রকল্পটি শীঘ্রই বাজারের আর পাঁচটি স্বাস্থ্যবিমার মতোই ‘হেলথ ইনসিওরেন্স’-এর চেহারা নিতে পারে। বর্তমানে বেশিরভাগ উপভোক্তা রয়েছেন ‘অ্যাসিওরেন্স মোড’-এ। এক্ষেত্রে উপভোক্তার খরচ বহন করে খোদ সরকার। ‘ইনসিওরেন্স মোড’-এ অন্য একটি চুক্তিবদ্ধ সংস্থা স্বাস্থ্যখাতে বিল যাচাই করে। উপভোক্তার খরচ মেটায়। বদলে সংস্থাটি বার্ষিক প্রিমিয়াম নেয়। স্বাস্থ্যসাথীর ক্ষেত্রে কোনটি যথোপযুক্ত, তা যাচাই করে এক সংস্থাকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের ৭০ লক্ষের বেশি পরিবার রয়েছে স্বাস্থ্যবিমা বা হেলথ ইনসিওরেন্স মোডে। বাকি ১ কোটি ৩০ লক্ষেরও বেশি পরিবার রয়েছে অ্যাসিওরেন্স মোডের আওতায়।
এক পদস্থ কর্তা বলেন, ইনসিওরেন্স মোডের সুবিধা হল: প্রথমত, পেশাদার এবং বিষয়টিতে ওয়াকিবহাল সংস্থা তা দেখাশোনা করে। দ্বিতীয়ত, সরকারি হোক বা বেসরকারি হাসপাতাল, উপভোক্তা যেখানে চিকিৎসা করাবেন, সেই হাসপাতাল সময় মতো চিকিৎসা খরচের টাকা পাবে। তৃতীয়ত, প্রকল্প বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে সরকারের প্রত্যক্ষ দায়দায়িত্ব থাকবে না। তবে সমস্যাও আছে। প্রথম হল, এককালীন প্রচুর টাকা প্রিমিয়াম দিতে হয়। দ্বিতীয়ত, চুক্তির ১ বছরের মধ্যে প্রকল্পে পরিবর্তন করা যায় না। অ্যাসিওরেন্স মোডে ইনসিওরেন্সের মতো এককালীন মোটা টাকার প্রিমিয়াম দিতে হয় না। যেমন খরচ হয়, মাসে মাসে তেমন মেটাতে হয়। চাইলে প্রকল্পে পরিবর্তনও আনা সম্ভব। দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে সরকারের। দোষ হলে সরকারের, ভালো হলেও সরকারের।