আনিসকে ঢাল করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে বামেরা, ক্ষুব্ধ নিহত ছাত্রনেতার বাবা
রাজ্য রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠার চেষ্টায় আনিস খান ইস্যুকে মরিয়া হয়ে আঁকড়ে ধরেছে সিপিএম তথা বাম শিবির। থানা ঘেরাও করে পুলিসকে আক্রমণ, দলবেঁধে কলকাতা থেকে গিয়ে প্রায় দু’ঘণ্টা ‘হত্যে’ দিয়ে পড়ে থেকে খান পরিবারের সঙ্গে দেখা করা, টিভির পর্দায় জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখা, ঘুরে দাঁড়াতে কোনও কিছুই বাদ রাখছেন না সিপিএম নেতারা। পুরভোটের প্রাক্কালে এহেন তৎপরতার সঙ্গেই নির্বাচনের আগের দিন, শনিবার ইস্যুকে জিগিয়ে রাখার মরিয়া চেষ্টা চালাল বাম ছাত্র-যুবরা। পাঁচলায় জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ করে হাঙ্গামা চালাল হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিস সুপারের অফিসের সামনে। পুলিসকে আক্রমণ, ইটবৃষ্টি, ভাঙচুর চালিয়ে নিজেদের পালে হাওয়া টানার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছে বাম ছাত্র-যুবরা। তবে যাঁকে সামনে রেখে ‘কচি বাম’দের এই আস্ফালন, সেই আনিস খানের বাবা সালেম খান অবশ্য তাকে সমর্থন করছেন না। তাঁর স্পষ্ট বার্তা—‘আমি অশান্তি চাইনা। আমি শান্তি চাই। দেশবাসী কী করেছে, সেটা আমি জানি না। আমি শুধু ছেলের খুনের ন্যায় বিচার চাই। ’
অন্যদিকে, গ্রামীণ জেলার পুলিস সুপারের দপ্তরে ‘কচি বাম’দের তাণ্ডবের প্রতিবাদে দলের ছাত্র-যবদেরই পথে নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী পুলক রায়ের কথায়, নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয় সিট গঠন করেছেন। হাইকোর্ট সিটের তদন্তকে অনুমোদন করেছে। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে। আর এই বিশৃঙ্খলার প্রতিবাদে সোমবার বিকেলে হাওড়া গ্রামীণ জেলা জুড়ে প্রতিবাদ মিছিল করবে তৃণমূলের ছাত্র-যুবরা। বিভিন্ন প্রান্তে হবে পথসভা। পুলকবাবুর বক্তব্য, আমরা পরিবারের পাশে আছি। বিচার ব্যবস্থার উপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে আমাদের।
এদিকে, শুক্রবার উলুবেড়িয়া উপ-সংশোধনাগারে দুই পুলিস কর্মীর টিআই প্যারেডের পর শনিবার তাদের উলুবেড়িয়া আদালতে তোলা হলে, বিচারক তাদের ১২ দিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দেন। অপরদিকে শুক্রবার আনিস খানের মোবাইল হস্তান্তর পরেই রাতেই সিটের তদন্তকারী অফিসাররা তাঁর বাড়িতে পৌছে যান। মৃতদেহ দ্বিতীয়বার ময়না তদন্তের জন্য এদিন তদন্তকারী অফিসাররা সালেম খানকে নোটিস দিলেও, তিনি আরও দুইদিন সময় চেয়ে নেনে। সালেম খান বলেন, তিনি এখন অসুস্থ। সেই কারণে সোমবার তাঁর এবং আইনজীবীর উপস্থিতিতে যেন কবরস্থান থেকে ছেলের মৃতদেহ তোলা হয়।
রাতে তদন্তকারী অফিসারররা চলে গেলেও, শনিবার ভোর ৫টা নাগাদ আমতা ২ নং ব্লকের বিডিও বিশাল পুলিস বাহিনী নিয়ে কবর থেকে মৃতদেহ তুলতে সারদা গ্রামে পৌঁছন। পুলিস গ্রামে পৌছাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। তদন্তকারী অফিসারাদের ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়। তাঁদের অভিযোগ, শুক্রবার রাতে দু’দিন সময় চেয়ে নেওয়া হলেও, কেন শনিবার ভোর রাতেই মৃতদেহ তুলতে আসা হল। গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের জেরে পুলিস ও প্রশাসনের কর্তারা গ্রাম ছেড়ে চলে যান। কেন রাতের অন্ধকারে কবর থেকে মৃতদেহ তুলতে পুলিস এল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সালেম খানও। তিনি বলেন, এই কারণেই আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছিলাম।