উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদে এবার হিন্দুদের একাংশের ভোটও পাবে না বিজেপি?
ফৈজাবাদ থেকে সবই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে আবহমানকাল ধরে। ইতিহাসের পাতায় ধীরে ধীরে শুরুত্ব হারানোই এই শহরের ভবিতব্য। নবাব সুজা উদ দৌলার পুত্র আসফ উদ দৌলা সিংহাসনে বসে সবথেকে বড় ধাক্কা দিয়েছিলেন। অবধ রাজ্যের রাজধানী ফৈজাবাদ থেকে তিনি সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে। সেই থেকেই অবধের রাজধানী হয় লখনউ। নবাব সুজা উদ দৌলার সমাধিস্থলেই ছিল পিতা- মাতার সমাধি। পিতার সমাধি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লির সফদরজং-এ। মাতার সমাধি স্থানান্তরিত হয় ফৈজাবাদের অন্য প্রান্তে। সুতরাং, ফৈজাবাদ ইতিহাসে শুধুই হারিয়ে গিয়েছে। পায়নি কিছুই। সেই তালিকায় নবতম সংযোজন যোগী আদিত্যনাথের সিদ্ধান্ত। প্রথমত, ফৈজাবাদ নামটিই তিনি মুছে ফেলতে চান। তাই এই জেলার নাম বদলে হয়েছে অযোধ্যা। জেলা সদর সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে অযোধ্যায়। ফৈজাবাদ স্টেশনের নাম এখন অযোধ্যা ক্যান্টনমেন্ট। অতএব ফৈজাবাদ পড়ে থাকবে শুধুই ইতিহাসের পৃষ্ঠায়।
নবাব সুজা উদ দৌলার সমাধিস্থল গুলাবি বাগের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার কর্মী কেয়ারটেকার মনোজ ভার্মা বললেন, ফৈজাবাদে হিন্দুদের একাংশের ভোটও এবার বিজেপি পাবে না। আমি বিজেপি সমর্থক। তা সত্ত্বেও কথাটা বলছি। কারণ, একটা গোটা শহরকে ধীরে ধীরে ম্লান, গৌরবহীন আর গুরুত্বহীন করে তোলা হচ্ছে। অযোধ্যায় দেখুন কত প্রকল্প ঘোষণা করা হচ্ছে। অথচ ফৈজাবাদের জন্য একটিও নয়। এখানে বেকারত্ব আরও বাড়বে। শুধুই ফৈজাবাদ? মনোজ ভার্মার আশঙ্কা, এবার উত্তরপ্রদেশের ভোটে গরিষ্ঠতা পাবে না বিজেপি।
পঞ্চম দফায় রাজ্যের ৬১টি আসনে ভোটগ্রহণ আজ। আর ৪০৩ আসনের বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে আজই সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ লড়াই। ৬১টি আসনের ভোটগ্রহণ নিয়ে সবথেকে বেশি চিন্তিত বিজেপি। কারণ, চতুর্থ দফা পর্যন্ত যে আসনগুলিতে ভোট হয়েছে, সেগুলির গতিপ্রকৃতি মোটামুটি নিশ্চিত। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে বিজেপি এবার আশানুরূপ ফল করছে না বলেই জল্পনা। কারণ, কৃষক আন্দোলন এবং রাষ্ট্রীয় লোক দল ও সমাজবাদী পার্টির জোট। এই বিচারে বিজেপি এবার প্রথম থেকেই পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ব্যাকফুটে। অবধ অঞ্চলে বিজেপি ও সমাজবাদী পার্টি সমান শক্তিশালী।
ঠিক এই কারণেই আজ হতে চলা ৬১টি আসনের নির্বাচনই বিজেপি এবং সমাজবাদী পার্টির ভাগ্য নির্ধারণ করবে। অযোধ্যা থেকে আমেথি। প্রতাপগড় থেকে প্রয়াগরাজ। সুলতানপুর থেকে চিত্রকূট। সংখ্যাগতভাবে এই পঞ্চম দফার ভোট নিয়ে বিজেপির আশঙ্কা থাকার কথা নয়। কারণ ২০১৭ সালে এই ৬১ আসনের মধ্যে ৪৭টি আসনই বিজেপির দখলে গিয়েছিল। তাই নিশ্চিন্ত থাকারই কথা। কিন্তু যোগীজি নার্ভাস। কারণ একটাই। ২০১২ সালে কিন্তু এই ৬১ আসনের ৪১টিই পেয়েছিল সমাজবাদী পার্টি। অর্থাৎ এখানে কোনও আসনই নিশ্চিতভাবে বিজেপি পেয়ে আসছে এরকমটা নয়। এবার মানুষ যদি মন বদলে ফেলে, তাহলেই বিজেপির সঙ্কট।
যেমন অযোধ্যা বিধানসভা আসনের কাঁটা ফৈজাবাদ শহর। তেমনই অযোধ্যা সংলগ্ন গোঁসাইগঞ্জও একটি উদাহরণ। এখানে বাহুবলীদের মধ্যে লড়াই। সেখানে বিজেপি প্রার্থী আরতি তিওয়ারি আসলে তাঁর স্বামীর প্রক্সি ক্যান্টিডেট। ইন্দ্রপ্রতাপ তিওয়ারি প্রভাবশালী বাহুবলী। তাঁর ভয়ে গোঁসাইগঞ্জ আর ফৈজাবাদ কাঁপে। কিন্তু ভোট ঘোষণার আগেই তিনি গ্রেপ্তার হয়ে জেলে। বিজেপি তাঁর স্ত্রী আরতী তিওয়ারিকে প্রার্থী করেছে। তিনিও কম যান না। লাইসেন্সড পিস্তল নিয়েই ঘোরেন। বিপরীতে সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী অভয় সিং। তিনিও নামজাদা বাহুবলী। অতএব দুই বাহুবলীর লড়াই হচ্ছে। অভয় সিং লড়ছেন ইন্দ্র তিওয়ারির স্ত্রীর সঙ্গে। গত সপ্তাহে দুই প্রার্থী যখন গাড়ি নিয়ে পরস্পরকে ক্রস করছেন হাইরোডে, তখনই দু’জনের গাড়ি থেকেই ছিটকে আসে গুলি। সুতরাং, রামমন্দির নয়। অযোধ্যা সংলগ্ন গোঁসাইগঞ্জে চলছে বুলেটের লড়াই।