করোনাকালেও বাংলায় ৭ হাজার কোটি বিদেশী বিনিয়োগ, বলছে রিপোর্ট
করোনার জেরে গোটা বিশ্বেই থমকে ছিল অর্থনীতি। ছন্দে ফেরেনি শিল্পক্ষেত্র। পরিষেবা ও উৎপাদন শিল্প মার খেয়েছে সর্বত্র। নগদ জোগানে টান থাকার পাশাপাশি ক্রেতার সংখ্যাও ছিল অনেকটাই কম। ভারতও তার বাইরে নয়। কিন্তু এসবের মধ্যেও করোনাকালে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে দেশে। সেখানে উজ্জ্বল বাংলা, বলছে খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের তথ্য বলছে, বিশ্বে যখন করোনার বাড়বাড়ন্ত, তখন ভিন দেশ থেকে এরাজ্যে বিনিয়োগ এসেছে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। ২০০০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে যেখানে মোট ৩৪ হাজার কোটি টাকার বিদেশি লগ্নি এসেছে রাজ্যে, সেখানে গত দু’বছরে সাত হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ যথেষ্ট সাফল্যের দাবি রাখে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজ্যের শিল্পবান্ধব ভাবমূর্তি এক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকা নিয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য বলছে, ২০০০ সালের গোড়া থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে মোট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৩৪ হাজার ৬৯ কোটি টাকার। এরপর ধীরে ধীরে করোনা ছড়াতে শুরু করে। ভারতে এর প্রায় ছ’মাস পরে করোনা এলেও, চীন সহ অন্যান্য জায়গায় সংক্রমণ শুরু হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তড়িঘড়ি প্রভাব পড়তে শুরু করে তখন। কেন্দ্রের হিসেব, সেই করোনা পর্বে, অর্থাৎ ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকার। ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে তা ছিল ৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ন’ মাসে, অর্থাৎ গত এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকার বিদেশি লগ্নি এসেছে বাংলায়। অর্থাৎ ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগের মোট অঙ্ক ৬ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা।
বিনিয়োগের মাটি হিসেবে বরাবরই এদেশে পিছিয়ে থেকেছে পূর্ব ভারত। পশ্চিমবঙ্গও তার ব্যতিক্রম ছিল না। এর অন্যতম কারণ যে শিল্পবান্ধব ভাবমূর্তি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বাম আমলের কর্মসংস্কৃতি ও শিল্পের প্রতি প্রশাসনিক উদাসীনতা এর অন্যতম কারণ হিসেবেই মনে করেন অনেকেই। রাজ্যের এই ভাবমূর্তি বদলের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে রাজ্য সরকার, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যে পরপর কয়েকটি শিল্প সম্মেলন হয়েছে। সেই বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে যেমন দেশীয় শিল্প প্রতিনিধিরা এসেছেন, তেমনই অনাবাসী ভারতীয় শিল্পপতি ছাড়াও এসেছেন বিদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আমলারা। বিনিয়োগ কোনও ম্যাজিক নয়, যা তৎক্ষণাৎ আসে, বলছেন অর্থনীতিবিদরা। শিল্প সম্মেলনের বার্তা ধীরে ধীরে বরফ গলাচ্ছে।
বিশ্ব ব্যাঙ্ক ‘ইজ অব ডুইং বিজনেস’-এর উপর যে র্যাঙ্কিং করে, সেই তালিকায় ভারতে সেরা দশের তালিকায় আছে পশ্চিমবঙ্গ। বিনিয়োগের লক্ষ্য হিসেবে তার সুফলও মিলছে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। লগ্নি আসার অন্যতম বড় শর্ত হল শিল্পের গা থেকে প্রশাসনিক লাল ফিতে আলগা করা। সেই কাজটির জন্য নিরন্তর চেষ্টা চলছে, বলছে বিশ্ব ব্যাঙ্কের তালিকাই। তাই বাংলার বিদেশি লগ্নির ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে, মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।